শেষ পর্যন্ত কি হবে তা এখনও অস্পষ্টই রয়ে গেলো

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। গতকাল রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলটির আগের এ অবস্থান তুলে ধরেন নেতারা। বিএনপি মনে করে  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতমূলক নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বৈধতা পাবে ।

অন্যদিকে, বৈঠকে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন । একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে সংস্থাটি। বিএনপিকে এ বার্তা দিয়ে ইইউ বলেছে, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তারা। এ কারণে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী জুন-জুলাই মাসে নির্বাচন-পূর্ব পর্যবেক্ষক দল ঢাকা আসবে।

 

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজ অবস্থান তুলে ধরে ঢাকার ইইউ ডেলিগেশন প্রধান চার্লস হোয়াইটলি  গণমাধ্যমকে     বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর কাছে অগ্রাধিকারে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা নির্বাচনের আগে ১২ পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে থাকি, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা থাকতে হবে। এ বিষয়টি আমরা বৈঠকে জানিয়েছি।

বিএনপির উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে সবার বিস্তারিত জানা রয়েছে। তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। আমরা তা শুনেছি, যা আমরা সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে কথা শুনে থাকি।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে এ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি তার আগের অবস্থান তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়েছে। তারা গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, বিরোধীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতাসহ আগের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। বৈঠকে তাদের প্রধান বিষয় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, যা ইইউ রাষ্ট্রদূতদের কাছে নতুন কিছু নয়।

বৈঠকে উপস্থিত এক রাষ্ট্রদূত  বলেন, বিএনপি মনে করে, বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ও পক্ষপাতমূলক। কারণ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনকে ডাকাতি করে নিয়ে যাবে, যা আগে তারা করেছে। আর এমন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ আবারও বৈধতা পাবে। বৈঠকে তারা জানায়নি, কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরত আনবে বা সরকারকে কীভাবে এতে রাজি করাবে। এ সময় আমাদের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে বিএনপি নেতাদের। তবে আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করব না।

 

এ নিয়ে আরেক রাষ্ট্রদূত  বলেন, প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবে যারা এতে অংশ নেবে, তাদের পক্ষেই ফলাফল যাবে। তাতে পর্যবেক্ষণ করার কিছু নেই। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করতে পারলে এটি ভালো হয়েছে, না খারাপ হয়েছে, তা বলার অধিকার সীমিত হয়ে আসবে অংশীদারদের।

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সঙ্কট সৃষ্টি হিয়েছে তা নিরসনের জন্য বিদেশীদের চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ বলেই ধারনা করা যায় , ২০১৪ সালেও এরকম হয়েছিল তখন জাতিসংঘের দূত তারনাকো এসেছিলেন বাংলাদেশে তিনিও এই দুই দলের সাথে ম্যারাথন আলোচনা করেও সফল হতে পারেন নি । তখন সরকারী দল একতরফা নির্বাচন করেও ক্ষমতায় টিকে গিয়েছিলো পুরো মেয়াদ , ২০১৮ সালে বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশ নিলেও রাতের ভোটের অভিযোগ আনে , বিএনপি পরপর দুটি নির্বাচনে প্রতারণার শিকার হয়েছে বলেই আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে না , তারা মনে করে  বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের নির্বাচনী লড়াইটা শুধু আওয়ামীলীগ নয় , তাদের লড়াইটা করতে হবে প্রশাসন , আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে । ফলে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল কোনভাবেই অর্জিত হবে না বরং অতীতের দুটি নির্বাচনের মতোই ফলাফল হবে , তাদের দল  বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে । কিন্তু নির্বাচনের বিকল্প কি ?  আন্দোলনে কতটুকু তারা আশাবাদী বা সফল হবে এরকম কিছুও এখনও স্পষ্ট নয় । শেষ পর্যন্ত কি হবে তা এখনও অস্পষ্টই রয়ে গেলো ।

হাবিব বাবুল , প্রধান সম্পাদক , শুদ্ধস্বর ডটকম ।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.