
‘মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তচেতনা, দুয়ের প্রত্যয়ে আমাদের প্রকাশনা’ এই অঙ্গিকার নিয়ে আগামী প্রকাশনীর পথচলা ১৯৮৬ সালে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন হাজারের অধিক। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সর্বাধিক বই প্রকাশ করে প্রকাশনাটি এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের জ্ঞানকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। নতুন-নতুন লেখক-পাঠক তৈরির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এই প্রকাশনার পথ ধরে অনেক গুণী লেখক পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-সম্মাননাসহ আরো অন্যান্য পুরস্কার। তেমনি এবার বইমেলায় পুরস্কার লাভ করেন ওসমান গনি ও মিতিয়া ওসমান তিসর্মা। সম্পর্কে তারা বাবা-মেয়ে।
ওসমান গনি বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এফবিসিসিআই স্থায়ী কমিটির (কপিরাইট) সাবেক চেয়ারম্যান, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েব প্রিন্টার্স অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির আজীবন সদস্য, সদস্য, বাংলা একাডেমি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি থাকাকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশ থেকে তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ ৬ বছর তিনি ঢাকা চেম্বারের পরিচালক ছিলেন।
তিনি শ্রেষ্ঠ প্রকাশক পুরস্কার, ১৯৯৫; ন্যাশনাল বুক সেন্টার, সুন্দর বই উৎপাদনের পুরস্কার, ১৯৯৫, ১৯৯৭ এবং ২০০০ ন্যাশনাল বুক সেন্টার, স্টলের আলংকারি পুরস্কার, ১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ ঢাকা বইমেলা, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৯৮, ২০০১ এবং ২০০২, শ্রেষ্ঠ প্রকাশক পুরস্কার, নাট্যসভা, ২০১১, বাংলা একাডেমি শহীদ মনির চৌধুরী পুরস্কার ২০১৩, চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
শিশুতোষ বই প্রকাশের ক্ষেত্রে ময়ূরপঙ্খি এক অনন্য নাম। ২০১৫ সালে প্রকাশনায় হাতেখড়ি নিয়ে প্রায় ২৫০টির অধিক বই প্রকাশ করেছে। প্রকাশনার গুণগত মান ও লক্ষ্য ঠিক রেখে শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য নিরলসভাবে কাজে করে যাচ্ছে।
ময়ূরপঙ্খির প্রকাশক মিতিয়া ওসমান তিসমা প্রকাশনায় পেশাদারিত্বের জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলম্বিয়া পাবলিশিং কোর্স সম্পন্ন করেন এবং প্রকাশনার অভিজ্ঞতার জন্য জার্মান বুক অফিস কর্তৃক পাবলিশার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামের অংশগ্রহণ করেন ।
তিনি পৃথিবীর বৃহত্তর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় অতিথি হিসেবে যোগ দেন ২০১৭ ও ২০২১ সালে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় পরপর দুইবার, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালে অংশগ্রহণ করেন ইন্দোনেশিয়ার সাহিত্য উৎসবেও। অন্যদিকে শারজাতে অনুষ্ঠিত ফেলোশিপ প্রোগ্রামে তিনবার অংশগ্রহণ করেন। এ ধরনের আরেকটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য তুরস্কেও যান। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২০১৮ সালে যুব সম্মিলনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারত সফর করেন তিনি। লন্ডন, বলোনিয়া, সিউল, ইস্তাম্বুল, শারজা, ইন্দোনেশিয়া, গুটেনবার্গসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহণ করেন।
বাবা-মেয়ে দুজনই প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। দেশের নিবেদিত ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ এবং ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়। এই দুই ক্যাটাগরিতে যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারা সম্পর্কে পিতা-কন্যা। একই ক্যাটাগরিতে একই মঞ্চে পুরস্কার প্রাপ্তি একটি বিরল ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এজন্য পিতা-কন্যা খুবই আনন্দি ও উচ্ছ্বসিত। পুরস্কার দুটি তারা তাদের সব লেখক-পাঠকদের উৎসর্গ করেছেন।
দুই গুণী ব্যক্তিত্ব আগামী দিনগুলোতে প্রকাশনার মান সমুন্নত রাখতে এবং নতুন নতুন লেখক-পাঠক তৈরি করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই পুরুস্কার প্রাপ্তিতে শুদ্ধস্বর ডটকমের সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে হাবিব বাবুল , সৌরভ আদনান খান , আইরিন পারভিন , বুলবুল তালুকদার পুরুস্কার বিজয়ী আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি এবং ময়ূরপঙ্খীর প্রধান নির্বাহী মিতিয়া ওসমান তিসমাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন ।