
গত ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখ বার্লিনের পাঁচতারকা হোটেল‚ ওয়াল্ডর্ফ এস্টোরিয়া -তে এক বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩ উদযাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস-বার্লিন, জার্মানি কর্তৃক আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বার্লিনস্থ প্রায় ৩০টি দূতাবাসের মিশনপ্রধান ও কূটনীতিক, জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তর, বৈদেশিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক বিষয়াবলী ও জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রতিরক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিনিধি, অনারারি কনসালবৃন্দ, জার্মান ব্যবসায়ী সহ প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন গুণীজন, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ যোগদান করেন। শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে উক্ত আয়োজনে আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মানি-দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের প্রধান ও সাবেক জার্মান মন্ত্রী, মিজ রেনাটে ক্যুনাস্ট, এমপি।
বাংলাদেশ ও জার্মানি দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রেক্ষাপটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান নেতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহিদ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সকল বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মা-বোনের অপরিসীম ত্যাগ-তীতিক্ষার কথা উল্লেখ করে বিশেষ এই দিনে তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে এই জাঁকজমকপূর্ণ মিলনমেলার আয়োজনে উপস্থিত হওয়ায় সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
তাঁর বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্জন এবং বর্তমান সরকারের গৃহীত বিবিধ উন্নয়ন কর্মসূচীর ফলে বাংলাদেশ কিভাবে আজ “উন্নয়ন বিস্ময়” ও সঠিক বিনিয়োগের স্থান হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে, সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে আলোকপাত করেন। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ ও জার্মানির মাঝে বিদ্যমান বন্ধুত্ব ও আন্তরিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি এই সম্পর্ককে আরো গভীর ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, নিরাপদ অভিবাসন, নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তি উৎপাদনের অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনে দুই দেশ একসাথে কাজ করবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক কাঠামোর উত্তরণে অভিনন্দন জানিয়ে অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি, জার্মানি-দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের প্রধান ও সাবেক জার্মান মন্ত্রী, মিজ রেনাটে ক্যুনাস্ট, এমপি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন যে বাংলাদেশ-জার্মানি ঐতিহাসিক সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে এবং এবং এটি ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩ আয়োজনে তিনি মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন । স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের বিশেষ কেক কাটার পর অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়। জার্মানিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজস্ব আয়োজনে বাংলাদেশের গান, নাচ ও দূতাবাস কর্তৃক তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য পর্ব সকলে মুগ্ধতার সাথে উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানের শেষাংশে আগত অতিথিবৃন্দের জন্য বুফে ডিনারে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। পরিশেষে দূতাবাসের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে “জয় বাংলা” ধ্বনিতে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ফাতেমা রহমান রুমা, শুদ্ধস্বর ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি ।