
শরীরে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে অনেকেই ঝুঁকছেন জিরো ক্যালরি সুইটেনারের দিকে। বিশ্বজুড়েই ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই কৃত্রিম চিনি। কিন্তু যারা চিনির বিকল্প হিসেবে জিরো ক্যালরির সুইটেনার খাচ্ছেন, এবার তাদের জন্যও বড় দুঃসংবাদ দিলেন গবেষকরা। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত জিরো ক্যালরি পণ্য ‘এরিথ্রিটল’ গ্রহণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এ খাদ্যপণ্যের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এমনকি মৃত্যুঝুঁকিরও সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
লাইভ সায়েন্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে আঙুর ও মাশরুমের মতো বিভিন্ন ফল ও সবজিতে এরিথ্রিটল পাওয়া যায়। এতে চিনির মিষ্টির প্রায় ৭০ শতাংশ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে জিরো ক্যালরি হিসেবে মনে করেন। প্রাকৃতিক উৎসের বাইরেও কৃত্রিমভাবে প্রচুর পরিমাণে এরিথ্রিটল প্রস্তুত করা হয়। এগুলো রক্তে সুগার বাড়ায় না এবং অন্যান্য সুগার অ্যালকোহলের চেয়ে কম ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। ফলে চিনির বিকল্প হিসেবে খাদ্যপণ্যে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের খাদ্যপণ্যে চিনির বিকল্প হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
তবে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়, যাতে দাবি করা হয়েছে যে জিরো ক্যালোরির মিস্টির সঙ্গে সরাসরি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের গবেষকরা ৪০০০ জন আমেরিকান এবং ইউরোপীয়র মধ্যে এই গবেষণা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যারা সবথেকে বেশি কৃত্রিম সুইটেনার গ্রহণ করছে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি সবথেকে বেশি ছিল। উল্লেখ্য, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীদের ইতিমধ্যেই কিছু ধরণের হৃদযন্ত্রের রোগ ছিল। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের একজন কার্ডিওলজিস্ট ও গবেষণা দলের সদস্য ডঃ স্ট্যানলি হ্যাজেন বলেন, মানুষ এখন নিজেদের জন্য স্বাস্থ্যকর কিছু করার চেষ্টা করছে কিন্তু অসাবধানতাবশত তারা আরও ক্ষতি করতে পারে।
গবেষণাপত্রে আরো কিছু ল্যাব ও প্রাণীর ওপর গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এরিথ্রিটল এর কারণে রক্তের প্লাটিলেট খুব দ্রুত জমাট বাঁধে। আর সেই জমাট বাঁধা রক্তের দলা হৃদপিণ্ডে পৌঁছালে হার্ট অ্যাটাক অথবা মস্তিকে পৌঁছালে স্ট্রোক হতে পারে। ডেনভারের ন্যাশনাল জিউশ হেলথের ‘কার্ডিওভাসকুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’ বিভাগের পরিচালক অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, গবেষণার এই ফলাফল একটি সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, এরিথ্রিটল ব্যবহারে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটা নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। তবে সতর্ক থাকতে চাইলে আপনার খাবারে আপাতত এরিথ্রিটল না রাখাই ভালো হতে পারে।
ক্যালরি কন্ট্রোল কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রবার্ট র্যানকিন বলেছেন, খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহৃত এরিথ্রিটলের মত কম-ক্যালরির মিষ্টি জাতীয় উপাদান যে নিরাপদ, গত কয়েক দশকের গবেষণাগুলোতে সে কথাই বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও এরিথ্রিটল ব্যবহৃত খাবারের অনুমোদন দিয়ে আসছিল। এখন নতুন গবেষণায় যা বলা হচ্ছে, তা এতদিনের সেই ধারণার উল্টো।
তবে লাইভ সায়েন্স জানিয়েছে, গবেষণাটিতে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। কারণ এতে অংশ নেয়া সবার বয়স ৬০ বছরের বেশি। আবার তারা এরইমধ্যে হৃদরোগে ভুগছিলেন। যার অর্থ তারা ইতিমধ্যেই হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিলেন। আবার গবেষণায় যদিও দেখা গেছে এরিথ্রিটল রক্ত জমাট বাধে কিন্তু এটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে এটি আসলেই মানুষের মধ্যে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক সৃষ্টি করে।