
বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সীমিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে। ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ দূত শোলে খোলাসা করেই বলেন, কোথাও গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লে, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি সীমিত হওয়ার কারণ হবে!
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার আগাম অঙ্গীকার তথা রূপরেখা না দেয়ায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তবে ওই সম্মেলনে যোগদানের পূর্ব শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট ফরমেটে আগামীর গণতন্ত্র চর্চা বিষয়ক পরিকল্পনা জমা দিলে তাতে বাংলাদেশ অংশ নিতে পারবে।
মার্কিন দূত ডেরেক এইচ শোলের এই কথার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে তারা বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় , এর মানে হচ্ছে বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের নির্বাচনে নিশ্চিত করার কথা তারা উল্লেখ করেছেন , এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সমর্থনের কথা আবারও উল্লেখ করেছেন ।
ভারত এবং পশ্চিমা দেশগুলো যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী তাদের তৎপরতা দেখে তা সহজেই অনুমান করা যায় , এই বিশ্বায়নের যুগে নির্বাচন যে কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নয় তা আমরা অন্যান্য দেশের বেলায় দেখেছি , যেখানেই নির্বাচনে অনিয়ম হয় সেখানেই পশ্চিমারা কথা বলে । দক্ষিণ আমেরিকা , আফ্রিকা , এশিয়া এমনকি ইউরোপের কোন দেশে অনিয়ম হলে তারা ছাড় দেয় নি ।
বাংলাদেশের বিএনপি সহ বিরোধীদল গুলো নিরেপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে অহিংস আন্দোলন করছে , তারা স্পষ্ট বলেছে এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না , তাদের এই দাবীর সাথে যুক্ত না হলেও সরকারের বন্ধু হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও বলেছেন , বর্তমান অবস্থায় নিরেপক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় , আমেরিকা – ইউরোপের কূটনীতিকরাও জিএম কাদেরের সাথে বার বার সাক্ষাৎ করে দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন, তারই প্রেক্ষিতে জিএম কাদের সরাসরি নিরেপেক্ষ সরকারের কথা না বললেও ইঙ্গিতে তিনি নিরেপেক্ষ সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন ।
এখন কি করবে সরকার, এই প্রশ্নই আসছে আমাদের সামনে , প্রধানমন্ত্রী গতকালই বলেছেন বিরোধীদলের অসাংবিধানিক দাবী তিনি মেনে নেবেন না , অর্থাৎ তার সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে । সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি গণ্ডির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে , এর থেকে বের হওয়ার পথের সন্ধান এখনও পাওয়া যায় নি , সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সরকার এবং বিরোধীদলকে একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে, কি সেই সেই পথ তা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । বাংলাদেশ এরকম রাজনৈতিক সঙ্কটে আগেও পড়েছে , কিন্তু তার কোন স্থায়ী সমাধান না হওয়াতে সঙ্কট থেকে বের হতে পারেনি , ফলে গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে বাংলাদেশকে বিব্রত হতে হয়েছে বার বার , এবারো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়া বাংলাদেশর জন্য বিব্রতকর ।
হাবিব বাবুল,
প্রধান সম্পাদক , শুদ্ধস্বর ডটকম ।