
সুচিত্রা সেন (৬ এপ্রিল, ১৯৩১ – ১৭ জানুয়ারি, ২০১৪) একজন ভারতীয় মূলত বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী । তাঁর আসল নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তিনি বাংলার পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা সিনেমায় উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন “সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস” জয় করেন। প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে তিনি এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকার ১৯৭২ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান করে। শোনা যায়, ২০০৫ সালে তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল; কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন নি। ২০১২ সালে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।
ছোটোবেলা
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক নিবাস।) পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিবাহ হয়। তাঁদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন অভিনেত্রী।
চলচ্চিত্র জীবন
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন কিন্তু সেই ছবি মুক্তি পায় নি। এরপর উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স-অফিসে অসম্ভব সাফল্য লাভ করে এবং সেই থেকে উত্তম সুচিত্রার যাত্রাপথ শুরু হয়। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এই জুটি আজও সর্বসেরা এবং এইরকম জনপ্রিয় জুটির কাছাকাছিও কেই পৌঁছতে পারে নি। প্রায় ২০ বছরের উপর এই জুটি বাংলা সিনেমা্প্রেমীদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
অন্তরীণ জীবন
২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হন, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লি যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারণে তাকে পুরস্কার দেওয়া হয় নি।
মৃত্যু
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। তিন সপ্তাহ আগে ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শেষকৃত্যে গান স্যালুট দেবার কথা ঘোষণা করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠান।