দূষণে বাড়ছে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট! কী করবেন, কী করবেন না

দূষণ বাড়ছে। প্রায় নিয়মিতই দূষিত শহরের শীর্ষে থাকছে ঢাকার নাম। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স জানাচ্ছে- বসবাসের চূড়ান্ত অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা প্রতিদিনই এক-দুই-তিনের মাঝেই আছে। সেই সাথে চলছে শীতকাল। আছে গলা খুসখুস, সঙ্গে হাঁচি। প্রথম ক’দিন আদা, মধু, তুলসী পাতাযোগে গরম পানীয় খেয়ে খানিক আরাম পেলেও তা ক্ষণস্থায়ী। এর মধ্যে হঠাৎ ঠাণ্ডায় নাক দিয়ে পানি পড়ছে ক্রমাগত।
অথচ এই ছোটখাটো, সাধারণ ঠাণ্ডা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে, ওষুধ খেতে অনেকেই চান না।
কিন্তু দিন দিন এই উপসর্গ কমার বদলে যখন বাড়তে শুরু করে, তখন টনক নড়ে। শুধু তা-ই নয়, তার জন্যই নাকি কাজের জায়গায় সকলে সংক্রামিত হচ্ছেন এমন অভিযোগও করছেন অনেকে। কিন্তু শীতকালে ঠাণ্ডা লাগার মতো স্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে এর আগে এত মাথা ঘামাতে হয়নি কাউকে। সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলেছেন, এ নাকি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা নয়, মারাত্মক রকমের অ্যালার্জি।
কিন্তু মহামারী-পরবর্তী সময়ে এই উপসর্গগুলো হঠাৎ এত বেড়ে গেল কী করে? এর থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী? চিকিৎসকরা বলছেন, এ কথা সত্যি যে, আগের বছরগুলোর তুলনায় শীতকালীন অ্যালার্জির প্রকোপ এ বছর বেশি। অনেকে ভাবেন ঠাণ্ডার জন্যেই বোধ হয় অ্যালার্জি হচ্ছে। তা হলে তো ঠাণ্ডার দেশে সকলেই অ্যালার্জিতে ভুগতেন। তা তো হয় না। অ্যালার্জির আসল কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ। তবে দূষণের কারণে যে সকলে একই রকমভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এমন ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। কারও রক্তে ‘ইয়োসিনোফিল’-এর পরিমাণ বেশি থাকলে, কিংবা কারও ক্ষেত্রে হিস্টামিন কোষ ভেঙে রক্তে না মিশলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হয়।
আবার জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত কোনো দিন অ্যালার্জির নাম শোনেননি এমন অনেকেই হঠাৎ আক্রান্ত হচ্ছেন এই সমস্যায়। অ্যালার্জির প্রবণতা কেন বাড়ে তা জানতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে অ্যালার্জির কারণ। দেহের কোষে ‘হিস্টামিন’ নামে একটি যৌগ বন্দি অবস্থায় থাকে। শরীরবান্ধব নয়, এমন কিছু জিনিস শরীরে প্রবেশ করলে হিস্টামিনের বন্দি দশা নষ্ট হয়। তৎক্ষণাৎ সেটি তখন রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তে মিশতেই এর খারাপ প্রভাব পড়ে শরীরে। শীতকালে এটা বেশি হয় কারণ, এই সময়ে ‘অ্যালার্জেন’-এর সংখ্যা বাতাসে বেশি পরিমাণে থাকে। চোখ চুলকানো থেকে হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলা খুসখুস, শ্বাসকষ্ট, র্যাশ— এ সবেরই নেপথ্যে রয়েছে হিস্টামিন।
আগে শীতকালে ঘুম থেকে উঠলে ভোরবেলা কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকত চারদিক। কিন্তু এখন যত দূর চোখ যায়, শুধুই ঘিরে থাকে ধোঁয়ার চাদর বা ‘স্মোগ’। এই ধোঁয়া কিন্তু আমাদের জন্য খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে থাকা শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া তো সমাধান নয়, তা হলে কী করণীয়? বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ একেবারেই খাবেন না। যতই সাধারণ ঠাণ্ডা হোক, দোকান থেকে ইচ্ছেমতো অ্যান্টি-বায়োটিক খাওয়া ভীষণ বিপজ্জনক। গরম জলের ভাপ নেওয়া, গার্গল করা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
এ ছাড়া আর কী কী বিষয় মাথায় রাখা জরুরি?
মহামারীর সময় থেকে যে মাস্ক পরার অভ্যাস শুরু হয়েছিল, তা-ই চালিয়ে যেতে হবে। মাঝেমধ্যে রক্তে ‘অ্যালার্জেন’ পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি হতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের ভয় যেহেতু সবচেয়ে বেশি, তাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সংক্রমণ হওয়ার আগেই দুটি টিকা নিয়ে রাখা জরুরি। একটি ফ্লু থেকে এবং আর একটি নিউমোনিয়া থেকে বাঁচার জন্য। তবে টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।