ট্যাংক দিতে দেরি করায় জার্মানির তীব্র সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ বছরের শুরু থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড চাপে রয়েছে ইউক্রেন। ক্রমশ সামনে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। এমন অবস্থায় রাশিয়াকে থামাতে জরুরি ট্যাংক দরকার ইউক্রেনের। কিন্তু পশ্চিমা মিত্রদের কাছে অত্যাধুনিক সব ট্যাংক থাকলেও নানা যুক্তি দিয়ে তারা ট্যাংক পাঠাতে বিলম্ব করছে। এ নিয়ে চটেছেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তিনি লিওপার্ড ২ ট্যাংক পাঠাতে জার্মানির গড়িমসির সমালোচনা করেন। জার্মানি জানিয়ে দিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তাদের ট্যাংক পাঠায়, শুধুমাত্র তাহলেই জার্মানি ট্যাংক পাঠাবে। তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জার্মানির এমন শর্তকে মূলত তাদের ট্যাংক পাঠানোর ইচ্ছার অভাব হিসেবেই দেখছে। জেলেনস্কি বলেন, বার্লিনের উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করা।
এআরডি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলতসেরও নিন্দা করেন।

বার্লিন বারবার বলছে, মিত্রদের ছাড়া তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্যাংক পাঠাবে না তারা। জেলেনস্কি বলেন, জার্মানির এমন কিছু বলার সুযোগ থাকা উচিৎ নয়। ‘যদি আমেরিকা কিছু করে, তাহলে আমিও কিছু করবো’-এটি কোনো কথা হতে পারে না। আপনারা সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ। আপনারা ছয় মাস বসে এসব কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইউক্রেনে প্রতিদিন মানুষ মরছে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, যদি এই ইস্যুতে কোনো রাজনীতি না থাকে তাহলে আপনাদের বারবার এক্সকিউজ (অজুহাত) দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের বলে দিন যে, আপনারা ট্যাংক দিতে পারবেন না। তিনি জার্মানির উদ্দেশ্যে বলেন, এমন নয় যে আমরা কাউকে আক্রমণ করছি, আপনাদের উদ্বেগের কিছু নেই। এই লিওপার্ড নিয়ে আমরা রাশিয়ায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি না। আমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করছি। এতদিন জার্মানি আমাদের জন্য যা করেছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমি চাই সবাই শুনুক যে, আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জার্মানিকে আধুনিক লিওপার্ড ট্যাংক দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে জার্মানি আশঙ্কা করছে, ইউক্রেনকে এই ট্যাংক দিলে তা রাশিয়ার হাতে পড়বে। আবার ইউক্রেন যদি এই ট্যাংক ব্যবহার করে রাশিয়ায় আক্রমণ করে তাহলে এর জন্য জার্মানিকে দায়ী করতে পারে মস্কো। তাই দেশটি বলছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এম১ আব্রামস ট্যাংক দেয়, তাহলেই কেবল তারা ইউক্রেনকে নিজেদের ট্যাংক দেবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠানোর ঝুঁকি নেবে না জেনেই মূলত জার্মানি এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ইউক্রেনের।
পেন্টাগনও এখন ট্যাংক পাঠানো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের ট্যাংক চালানো অনেক কঠিন, ইউক্রেন এই ট্যাংক চালাতে পারবে না। জো বাইডেনের মুখপাত্র কেরিন জিন-পিয়া বলেছেন, তাদের প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে কী ধরনের সামরিক সহায়তা পাঠানো দরকার, সেটি নিয়ে মিত্র দেশগুলোর সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীনতা দেওয়া উচিৎ। এর মধ্যেই ১৮ই জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো মেরামতে যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন। দেশটির সামরিক কর্তারা ইউক্রেনে কানাডায় তৈরি স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান পাঠানোর ঘোষণার কথা বলেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ট্যাংক পাঠাতে রাজি নন তারা। অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা কয়েকদিন পর আসতে পারে বলেও জানান তারা।
তবে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে বৃটেন। পোল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডও সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাদের ট্যাংকও কেনা জার্মানি থেকে। চুক্তি অনুযায়ী, জার্মানির অনুমতি ছাড়া তারাও ইউক্রেনকে ট্যাংক দিতে পাড়ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ডসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কাছে রয়েছে লিওপার্ড-২ ট্যাংক। ৬০ হাজার কেজি ওজনের ট্যাংকটিতে ১২০ এমএম স্মুথবোর গান আছে। যেটি পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। কিন্তু জার্মানির অনুমতি ছাড়া এ ট্যাংক অন্য দেশের যুদ্ধের ময়দানে নামাতে ‘না’ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার পেন্টাগন ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেনের জন্য বাইডেন সরকার ২.৫ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ তৈরি করেছে। এর মধ্যে ৯০টি স্ট্রাইকার কমব্যাট গাড়ি বা সাজোয়া গাড়ি, ৫৯টি ব্র্যাডলি সাজোয়া গাড়ি-সহ প্রচুর গোলা-বারুদ দেওয়ার কথা আছে। কিন্তু ট্যাঙ্কের উল্লেখ নেই। শুক্রবার জার্মানিতে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশের বৈঠক হচ্ছে। গত একবছরে এই নিয়ে ইউক্রেনকে সব মিলিয়ে ২৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ দিল যুক্তরাষ্ট্র।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.