
কয়েকজন বিক্ষোভকারী কয়লাখনিটির ভেতরের টানেলে প্রবেশ করেছেন। পুলিশ বলছে, এটি বিপজ্জনক আচরণ।
রোববার জার্মানির বিভিন্ন এলাকা থেকে চার হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী লুৎজারথের কয়লাখনি এলাকায় যান।
গ্রেটা থুনবার্গ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, ‘কয়লা এখনো মাটিতে আছে এবং আমরা এখনো এখানে আছি।’
গত শনি ও আজ রোববার পুলিশের অভিযানের আগেই বিক্ষোভকারী পরিবেশবাদীরা খনি এলাকায় যান। পুলিশের প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে যাওয়ার সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
পুলিশ বলছে, বেশির ভাগ মুখোশধারী বিক্ষোভকারী পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে খনির বিপজ্জনক এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ ওই খনি এলাকা জলকামান, অশ্বারোহী স্কোয়াড্রন ও কুকুর দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
জার্মানিতে কয়েক দশক আগে থেকেই পরিবেশবাদীদের চাপে রাজনৈতিক দলগুলো জ্বালানি ও পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্পগুলো থেকে সরে আসছিল। দুই দশক ধরে জার্মানিতে সৌর, বায়ু বা পানিবিদ্যুৎ থেকে উৎপাদিত বিকল্প জ্বালানির হার ক্রমেই বাড়ছে।
জার্মানির অন্যতম জ্বালানি উৎপাদন কোম্পানি রাইনিখ (ভেস্টফ্যালিয়া ইলেকট্রিক পাওয়ার স্টেশন বা আরডব্লিউই) ১৯৭৪ সালে করা এক চুক্তি অনুসারে, হামবাখার ফ্রস্ট এলাকায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর বনভূমি ও লুৎজারথ অঞ্চলের উন্মুক্ত কয়লাখনি খননের অনুমোদন পায়।
চুক্তির চার বছর পর ১৯৭৮ সালে আরডব্লিউই নামে প্রতিষ্ঠানটি ওই এলাকায় উন্মুক্ত কয়লাখনির জন্য খননকাজ শুরু করে। চার বছর পর কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। এই মুহূর্তে এলাকা দুটি জার্মানির বৃহৎ কয়লা উৎপাদনকেন্দ্র।
জার্মানিতে আণবিক চুল্লি থেকে উৎপাদিত জ্বালানি বন্ধের দাবিতে পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন।
জার্মান সরকার ২০১১ সালে নৈতিক কমিশন গঠন করেছে। সে অনুসারে গত বছর জার্মানির সব আণবিক চুল্লি থেকে উৎপাদিত জ্বালানিকেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার কথা।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জার্মান সরকার নতুন করে উন্মুক্ত কয়লাখনি খননের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে।
২০২১ সালের ১৪ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন জলবায়ুবিষয়ক ‘ফিট ফর ফিফটিফাইভ’ নামে যে কর্মসূচি নিয়েছে, যুদ্ধের কারণে এখন তা মুখথুবড়ে পড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকারক কার্বন নিঃসরণ পরিকল্পনা থেকে এখন পেছনে হাঁটছে জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলো। বিশ্বে উষ্ণতা কমাতে ‘ফিট ফর ফিফটিফাইভ’ প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পটভূমি সামনে রেখে তৈরি হয়েছিল।
এই পরিকল্পনায় ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস বা নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল। আর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগামী দশকগুলোতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ নির্গমন কমানোর ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
এই সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আবার কয়লা ও পারমাণবিক চুল্লি আরও দীর্ঘ সময় চালু রাখার কথা ভাবছে।
প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে পুলিশের হামলা ও জোর করে লুৎজারথ এলাকার বনভূমি থেকে বিতাড়িত করে দেওয়ার বিষয়টি সপ্তাহজুড়ে জার্মানির আলোচনায় এসেছে।