লুলার ক্ষমতা গ্রহণের আগে ব্রাজিল ছাড়লেন বলসোনারো

গত অক্টোবর মাসে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পান বামপন্থী লুলা দা সিলভা। ১লা জানুয়ারি বছরের প্রথম দিন ক্ষমতা হাতে পাচ্ছেন তিনি। এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ব্রাজিল ছেড়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। লুলা যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন, বলসোনারো তখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন। ব্রাসিলিয়া বিমান ঘাঁটি থেকে ব্রাজিলিয়ান এয়ার ফোর্সের একটি বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার উপদেষ্টারা এবং স্ত্রী মিশেল বলসোনারো। যাত্রার আগে বলসোনারো তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আবার ফিরে আসবো।
সিএনএন জানিয়েছে, বলসোনারো যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। ব্রাজিলের সরকার ক্ষমতার শেষ দিনে পাঁচ সরকারী কর্মকর্তাকে বলসোনারোর জন্য নিযুক্ত করেছে। ব্রাজিলে ফেরার কথা বললেও, কবে তিনি ফিরবেন তা অনিশ্চিত। ব্রাজিলের ঐতিহ্য অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের সময় সেখানে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকেন।

তবে এবার সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রোববার যখন লুলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন তখন বলসোনারো থাকবেন মিয়ামিতে। 

যাত্রার আগে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিদায় বার্তা দেন বলসোনারো। এতে তিনি বলেন, ১লা জানুয়ারি ব্রাজিলের পতন হবে না। ব্রাজিলের মানুষ এখন রাজনীতি সম্পর্কে আরও অনেক বেশি জানে। তারা এই ঝুঁকি সম্পর্কে বুঝে। ভালো’র জয় হবেই। গোটা ব্রাজিলজুড়ে আমাদের নেতারা রয়েছেন। তারা পার্থক্য গড়ে দেবেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার নিজের ক্যাবিনেট ঘোষণা করেছেন ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। এতে তিনি পরিবেশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নিজের মন্ত্রিসভায় এক অ্যামাজন বিশেষজ্ঞকে রেখেছেন লুলা। বিশিষ্ট পরিবেশবিদ এবং অ্যামাজন বিশেষজ্ঞ মারিনা সিলভা দেশের পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাবেন। এর আগে লুলা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনো পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। লুলার সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ার কারণেই পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ৩৭জন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট লুলা। তার মধ্যে ১১জনই নারী! ব্রাজিলের ইতিহাসের রেকর্ড সংখ্যক নারীকে এবার মন্ত্রিসভায় দেখা যাবে। বলসোনারোর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে নেমে বামপন্থী লুলা প্রথম থেকেই অ্যামাজন বাঁচানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। লুলা বলেছিলেন, জঙ্গলকাটা বন্ধ করতে এবং অ্যামাজনকে বাঁচাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন তিনি। মারিনা এর আগে দেশের পরিবেশমন্ত্রীর কাজ করেছেন। অ্যামাজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তিনি। বস্তুত, মারিনার জন্ম অ্যামাজনে। একসময় সেখানে রবার শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।

অ্যামাজন নিয়ে জাতিসংঘে বক্তৃতা করেছেন মারিনা। গত অক্টোবরে মিশরের পরিবেশ বিষয়ক সভাতেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, সুযোগ পেলে ২০৩০ সালের মধ্যে অ্যামাজন ধ্বংস শূন্যে নামিয়ে আনবেন। বস্তুত, লুলার নির্বাচনী প্রচারেও একই কথা বলা হয়েছিল।

বলসোনারোর আমলে অ্যামাজন ধ্বংসের অভিযোগ উঠেছিল সবচেয়ে বেশি। বলসোনারোর ঘোষিত নীতি ছিল, জঙ্গল সাফ করে উন্নয়নের কাজ করতে হবে। লুলা ঠিক তার বিপরীত কাজ করার কথা বলছেন। ওলা জানুয়ারি লুলার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে ব্রাজিলের রাজধানী।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.