ইসমতের বাসা থেকে ১৪ নভেম্বর শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে গিয়ে ওঠেন হেলাল হাফিজ। পূর্বপরিচিত এই হোস্টেলই এখন তার ঠিকানা।
ইসমত শিল্পী বলেন, ‘হাসপাতাল-পরবর্তী ২৫ দিন কবি আমার এখানে ছিলেন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি তার সুস্থতা-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের। এখন ব্যক্তিগতভাবে ফোনে যথাসম্ভব খোঁজখবর রাখতে চেষ্টা করছি।’
হেলাল হাফিজ ডায়াবেটিস, কিডনি আর গ্লুকোমার পাশাপাশি বার্ধক্যের নানা জটিলতায় ভুগছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
কবি হেলাল হাফিজের জীবন এক দশক ধরেই কাটছিল হোটেলে হোটেলে। সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ভর্তির আগেও তিনি সুপার হোমে ছিলেন। ২০ অক্টোবর যখন হাসপাতাল ছাড়েন, তখন সেই হোস্টেলে সিট খালি না থাকায় হেলাল হাফিজকে সেগুনবাগিচায় নিজের বাসায় নিয়ে যান ইসমত শিল্পী। তিনি বলেন, কবির থাকার জন্য একটি ভালো জায়গা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কাউকে কিছু বলতে চান না কবি।
গত ৮ অক্টোবর তার ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক আনন্দ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কবি।
কবি হেলাল হাফিজের থাকার জায়গা না থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর একাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যেগেও তার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেন কেউ কেউ। কিন্তু হেলাল হাফিজ কারও ওপর নির্ভর না করে সুপার হোমেই ফিরে গেছেন।
হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবি খ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান।
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পরে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।