facebook sharing button
messenger sharing button
whatsapp sharing button
twitter sharing button
linkedin sharing button
print sharing button

রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে আমূল পরিবর্তন আনাসহ স্থায়ীভাবে গণতন্ত্র সুসংহত করতে চায় বিএনপি। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে শিগগিরই জনগণের সামনে রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব পেশ করা হবে। যার খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

 

সংস্কার প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে-ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন এবং সংবিধানে আনা হবে ব্যাপক সংশোধন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ বা ‘জাতীয় সরকার’ গঠন। খসড়ায় নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাসহ সংবিধান সংস্কার কমিশন, ইসি নিয়োগে আইন সংশোধন, বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে জুডিশিয়াল কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগ, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন, রংধনু জাতি প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি রয়েছে।

 

খসড়ায় বলা হয়েছে, বিগত এক দশকের বেশি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার হীন উদ্দেশ্যে অনেক অযৌক্তিক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী এনেছে। একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনগুলো পর্যালোচনা করে তা রহিত/সংশোধন করা হবে। সংবিধানে গণভোটব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা হবে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রংধনু জাতি’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে ‘জাতীয় সমঝোতা কমিশন’ গঠন করা হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অর্থবিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন এবং সংবিধান সংশোধনী বিল ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংসদ-সদস্যদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন’ সংশোধন করা হবে। ইভিএম নয়, সব কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতঃপূর্বকার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলব্যবস্থা’ পুনঃস্থাপন করা হবে। এজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

খসড়ায় আরও বলা হয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে যোগ্য ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে। সুপ্রিমকোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হবে। অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, করপোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতের দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করা হবে এবং অপ্রয়োজনীয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করা হবে। এই খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ করা হবে না। বেকার যুবকদের যথাযথ কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত অথবা ন্যূনতম এক বছর পর্যন্ত ‘বেকার ভাতা’ প্রদান করা হবে। শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% হারে অর্থ বরাদ্দ করা হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করা হবে।

 

বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গেও আলোচনা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে অন্তত ১৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে। এই রাষ্ট্র সংস্কার ফর্মুলার বিষয়ে দ্বিতীয় দফায় আবারও সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার কথা রয়েছে। পরে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রস্তাব জনসমক্ষে তুলে ধরবে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading