
প্রথমত, নয় মাসের অনুপস্থিতিকালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে তাঁকে একজন প্রাদেশিক ‘জননেতা’ থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিশ্বনন্দিত ‘রাষ্ট্রনায়ক’ বানিয়ে দিয়েছিলেন তার গুরুত্ব ও ব্যাপকতা তিনি পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারেননি। অনুধাবনের খুব একটা চেষ্টাও করেননি। ফলে তাঁর আচরণ ও কথাবার্তা থেকে প্রাদেশিকতার বৈশিষ্ট্যগুলো কখনোই দূরীভূত হয়নি। একটি জাতির জনক হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তাঁর সমালোচনাকারীদের তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত আত্মত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনৈতিক সহকর্মী ও অনুসারীদের চাইতে তিনি আত্মীয়- কুটুম্ব ও কানপড়াদাতাদের কথাকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিতেন এবং শেষোক্তদের পরামর্শমতো সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহন করতেন। এটা প্রাদেশিক মনোভাবের প্রকাশক।
দ্বিতীয়ত, তিনি যে ১৯৭১-এর ঐ একই সময়ে বিরোধী দলের নেতা থেকে সরকার প্রধানে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন সেই পলিটিকাল মেটামর্ফোসিসের সাথেও খাপ খাইয়ে নিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফলে ক্ষমতায় থেকেও তিনি বিরোধীদলীয় নেতার মতো আচরণ করে গেছেন।
বক্তৃতা করা ও বিরূপ সমালোচনার দ্বারা জনগণকে সরকার বিরোধী করে তুলে তা থেকে নির্বাচনী ফায়দা তুলতে পারাটাই হচ্ছে বিরোধীদলের একমাত্র কাজ। সরকারের কাজ হচ্ছে কথার পরিমান কমিয়ে কাজের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধন করা। বঙ্গবন্ধু তা পারেননি। ফলে বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করলেও সরকার প্রধান হিসাবে তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দেন ।

শামসুদ্দিন পেয়ারা , লেখক এবং সাংবাদিক ।