ডলারের যোগান বাড়াতে বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া আমানতের সুদহারের সীমা ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবারের সার্কুলারে এখন থেকে ডলার বা বিদেশি মুদ্রায় জমা রাখা প্রবাসীদের আমানতে সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার বেঞ্চমার্ক দরের সঙ্গে কোন হারে সুদ দিতে হবে তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এতে বেঞ্চমার্ক রেফারেন্স দরের সঙ্গে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ যোগ করে সুদ দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; যা ৩ বছরের অধিক ও ৫ বছরের কম মেয়াদের আমানতের বেলায় প্রযোজ্য হবে।

আর বেঞ্চমার্ক দরের সঙ্গে ১ থেকে ৩ বছর মেয়াদি আমানতের বেলায় ২ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ যোগ করে সুদ দিতে হবে।

নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশি ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রায় রাখা প্রবাসীদের আমানত বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো ১, ৩, ৬ ও ১২ মাস মেয়াদে বিদেশি মুদ্রায় এনএফসিডি হিসাবে মেয়াদি আমানত নিতে পারে।

এর আগে গত ১৭ জুলাই এক সার্কুলারে প্রবাসী আমানতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে ইচ্ছেমত সুদহার নির্ধারণের সুযোগ দিয়েছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। তার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউরো মুদ্রার স্বীকৃত সুদহারের সমপরিমাণ সুদ দেওয়া যেত।মতিঝিল বাণিজ্যক এলাকায়

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডলারের হিসাব পরিচালনা করতে লাইবর রেট (ইংল্যান্ডের আন্তঃব্যাংকের ৩ মাসের সুদহার যা বর্তমানে এসওএফআর নামে পরিচিত) এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ দিয়ে আমানত নিতে পারবে দেশি কোনো ব্যাংক।

ঠিক একইভাবে ইউরো ‍মুদ্রার আমানতে ইউরোবর, পাউন্ডের বেলায় সোনিয়া (স্টারলিং ওভারনাইট ইনডেক্স এভারেজ) এর সুদহারকে রেফারেন্স রেট হিসেবে নিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

প্রবাসী বাংলাদেশি, নন-রেসিডেন্সিয়াল সিটিজেন (বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের দ্বৈত-নাগরিকত্ব আছে), বিদেশি মালিকানার কোম্পানি যারা নিজ দেশে বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত তাদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রায় আমানত নিতে পারে দেশি ব্যাংকগুলো।

বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত এসব ব্যাংক হিসাবকে এনএফসিডি (নন-রেসিডেন্ট ফরেইন কারেন্সি ডিপোজিট) বলা হয়। এগুলো ডলার আমানত হিসাব নামে অধিক পরিচিত।

বিদেশি মিশনে কর্মরত বা প্রেষণে যাওয়া কর্মকর্তা, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক, বিদেশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও শতভাগ বিদেশি মালিকানার শিল্প প্রতিষ্ঠানও বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন।

কোভিড ১৯ এর প্রভাব কমে আসায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলে অর্থনীতিতে বাড়ায় আমদানি বেড়ে যায়। কিন্তু ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বে জ্বালানি তেলের বাজার ঊধ্বর্মুখী হলে ও সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিলে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে।

বাড়তি আমদানি দায় মেটানোর মত রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় আসেনি বাংলাদেশে। এতে ডলারের সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামলাতে নিয়মিত টাকার অবমূল্যায়ন করে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈশ্বিক এ অর্থনৈতিক দুর্যোগের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে আগাম সতর্কতা হিসেবে সরকারও আমদানি খরচে লাগাম টানার পাশাপাশি ডলার সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বাড়তি সুদ দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আনার সুযোগ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এনএফসিডি হিসাব পরিচালনা করতে প্রবাসী ও বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বেলায় ন্যূনতম ১ হাজার ডলারের সমপরিমাণের বিদেশি মুদ্রা এবং অন্যান্যদের বেলায় ২৫ হাজার ডলার জমা রাখতে হয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading