
শ্রী লঙ্কায় একজন সরকার সমর্থক সাংবাদিককে লোকেরা রাস্তায় পিটিয়ে বিবস্ত্র করে ছেড়ে দিয়েছে। ঐ সাংবাদিকের নগ্ন পশ্চাদ্দেশ গত দু’দিন ধরে মুখপুস্তক (Facebook)-এ উৎকট ভাবে দৃশ্যমান। আমাদের দেশের জালুয়া সমাজ (netizens) দেখছি এতে অত্যন্ত উল্লসিত। কারণ ঐ সাংবাদিক রাজাপাকশের সমর্থক ছিলেন। তিনি বলতেন, রাজাপাকশের কোনো বিকল্প নাই।
এখন কথা হচ্ছে, তা হলে দেশে কি সরকার সমর্থক কোনো সাংবাদিক থাকবে না? মানুষ তার ইচ্ছানুযায়ী কোনো দল বা ব্যক্তিকে সমর্থন করতে পারবে না? সমর্থিত দল বা ব্যক্তির পতন হলে সমর্থকদের রাস্তায় পিটিয়ে লেংটা করে দিতে হবে? এর নাম সভ্যতা? এর নাম গণতন্ত্র? এর নাম মত প্রকাশের স্বাধীনতা? কক্ষনো না। এর নাম উগ্র ফ্যাসিবাদ। শক্তি দিয়ে ভিন্নমতকে নিস্তব্ধ করার যে নীতি মুসোলিনি হিটলার ফ্রাঙ্কো বাতিস্তা ইয়াহিয়া করেছিলেন সেটা। মধ্যযুগীয় প্রাক-গণতান্ত্রিক বর্বরতা।
যে কোনো ঘটনাকে নিজের আয়নায় দেখলে বুঝতে সহজ হয়।
ধরুন কোনো কারণে শেখ হাসিনার সরকার জনসমর্থন হারিয়ে একটি গণধিক্কৃত সরকারে পরিনত হলো। সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হলো। সে সময়ে আজকে আওয়ামি লিগের সমর্থক ও শেখ হাসিনার পোষ্য যে সাংবাদিক ও তাদের নেতারা (যদিও ‘সাংবাদিক নেতা’ বলে কিছু থাকতে পারে সেটাই একটা হাস্যকর ধারণা!) রয়েছেন তাদের এক বা একাধিকজনকে যদি লোকেরা ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বা মতিঝিল শাপলা চত্বর বা চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা বা রাজশাহির সাহেব বাজারে ঐ শ্রী লঙ্কার সাংবাদিকের অবস্থা করে দেয় আমরা কি তা’তে উল্লসিত বোধ করবো? অবশ্যই করবো না। বর়ং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করবো ও যারা সা়ংবাদিককে লাঞ্ছিত করেছে তাদেরকে গণতন্ত্রের মহাশত্রু হিসাবে আখ্যায়িত করবো। তাদের সঙ্গত্যাগ করব ও প্রকাশ্য-নিন্দা করবো।
গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত হচ্ছে অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা। আমাদের দেশ এখনো গণতন্ত্রের উপযোগি হয়ে ওঠেনি। গণতন্ত্র ছাড়া দেশ চালানো যাবে না। তবে তা হতে হবে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে চালু হওয়া সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত ও সুনিয়ন্ত্রিত এক নতুন গণতন্ত্র (guided and well controlled democracy)। যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শতভাগ জালিয়াতিমুক্ত নির্বাচন হবে। ভোটকেন্দ্রে কেউ বল বা ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে না। কেন্দ্র দখল করতে পারব না। পুলিশ বা মিলিটারি আগের রাতে ব্যালটপেপার দিয়ে ব্যালটবাক্স ঠেসে রাখবে না। ভোটাররা নিজে নিজের ভোট দিতে পারবেন। প্রশাসন হবে সম্পুর্ণ নিরপেক্ষ। প্রশাসনের কাজ হবে নির্বাচন পরিচালনা করা, নির্বাচনকে প্রভাবিত করা নয়। যারা বেশি ভোট পাবেন তারাই বিজয়ী হবেন।
তবে এখনকার মতো যারা নির্বাচনে জয়ী হবেন তারা ফলাফল প্রকাশের মুহুর্ত থেকেই দেশের মালিক ও জনগণের ভাগ্য বিধাতা হয়ে যাবেন না। পরাজিতদেরও দেশ পরিচালনায় ভূমিকা থাকবে। নির্বাচনে জেতা মানে দেওয়ানি মামলায় জিতে জমির চিরস্থায়ী মালিকানা লাভ করা নয়। দেশটা কারো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি নয়।
এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য দরকার একটা শক্তিশালী প্রেসিডেন্সি। যে প্রেসিডেন্সি দৈনন্দিন রাজনীতিতে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করবে না, কিন্তু রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাড়াবাড়ি অনিয়ম ও দুর্নীতি শক্ত হাতে দমন করার ও প্রয়োজনে পার্লামেন্টের স্বৈরাচার নিয়ন্ত্রনের সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী হবে। তবেই যদি কিছু হয়।
-শামসুদ্দিন পেয়ারা, লেখক, সাংবাদিক ।