রাশিয়ার নাগরিদের উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, যুদ্ধ থেকে আপনাদের ছেলেদের বাঁচান।

বুধবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাতে ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি।

জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন কখনোই রাশিয়ার নিরাপত্তাকে হুমকি দেয়নি। রাশিয়ান অপপ্রচারকারীরা যুদ্ধ সম্পর্কে মিথ্যা বলছে, এর জন্য তারা আপনার করের অর্থ ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, ইউক্রেনীয়রা তাদের দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

‘আমাদের ভূমি, আমাদের মানুষকে রক্ষা করতে এই যুদ্ধের অবসানের জন্য আমরা সবকিছু করছি। আমরা যখন এটা করতে সফল হব, আপনি অন্তত একটি ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন-আপনার সন্তানদের আর আমাদের দেশে, আমাদের ভূখণ্ডে মরতে পাঠানো হবে না’, বলেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার মূল পরিকল্পনা হামলার প্রথম দুই দিনে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এখনও সব জায়গা থেকে জনশক্তি পাচ্ছে। যুদ্ধ সরঞ্জাম, যুদ্ধবিমান, বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিশ্বজুড়ে ভাড়াটে সেনাদের খুঁজছে। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি করতে সক্ষম যেকোনো আবর্জনা।

জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সৈন্যরা আমাদের শহরগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বিচারে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। শিশুদের অপহরণ করছে এবং শরণার্থীদের ওপর গুলি ছুড়ছে। মানবিক বহরগুলোকে আটক করছে। তারা লুটপাটে লিপ্ত। তারা জাদুঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, স্কুল ও হাসপাতাল উড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসিক ভবন… যেকোনো কিছু তাদের লক্ষ্যবস্তু! রাশিয়ার সৈন্যরা মন্দের সীমা রাখছে না।

ইউক্রেনের ওপর ‘নো-ফ্লাই জোন’ করার অনুরোধ পুনরাবৃত্তি করে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের আকাশ রাশিয়ার বোমা থেকে নিরাপদ হয়নি এবং কিয়েভ বিমান, আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী অস্ত্র বা ট্যাংক পায়নি।

উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করে ইউক্রেন। মূলত, এ নিয়েই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো। কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। ঠিক তার দুদিন পর ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে।

এ দিকে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ। যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা নিহত এবং রাশিয়ার ১৫ হাজার ৬০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের প্রায় ৫০০ সৈন্য নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ অভিযানে ইউক্রেনে ৯২৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

সূত্র : সিএনএন

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading