
পদ্মা মেঘনা যমুনা– তোমার আমার ঠিকানা,আমার নেতা তোমার নেতা –শেখ মুজিব শেখ মুজিব,জয় বাংলা।গগন বিদীর্ণ করা এসব শ্লোগানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।মিছিল চলছে তো চলছেই।হাজারো তরুনের দৃপ্ত মিছিলের সামনে শ্লোগান দিয়ে চলছে এক তরুণ। শক্ত,সামর্থ, মাথা ভর্তি ঢেউ খেলানো অবিন্যস্ত ঝাঁকড়া চুল;বিরতিহীন শ্লোগান দিয়েই চললো তরুণটি মিছিল শেষ হওয়া পর্যন্ত।
সবার প্রিয়,দৃপ্ত মিছিলের প্রিয় মুখ –এই যুবকই হলেন চিশতি,চিশতি শাহ হেলালুর রহমান।সার্জেন্ট জহুর হলের(সাবেক ইকবাল হল)আবাসিক ছাত্র চিশতি উণসত্তুরের গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের লড়াকু ছাত্রনেতা।
চিশতির কথা স্মৃতিপটে আসলে মনে ভেসে ওঠে মিছিলের অম্লান স্মৃতি।
সাথে ভেসে ওঠে সাহসী ছাত্রনেতা আ ফ ম মাহবুবুল হক,জয় বাংলা শ্লোগানের উদগাতা প্রয়াত ড:আফতাবের কথা।মনে পড়ে যায় সুদীর্ঘ মিছিলের শেষ দিকে গোলাম ফারুকের গানের ঢংয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে সবাইকে উজ্জীবিত করার কথা।
উল্লেখ করা এসব ছাত্রনেতারা সবাই ছিলেন স্ব স্ব ভংগীমায় এক একজন উজ্জ্বল শ্লোগানিষ্ট।আর তাঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন চিশতী। উচ্চারণের বিশিষ্টতায়,কন্ঠের বলিষ্ঠতায়, গমগমে স্বরের ঐশ্বরিক আবেদনে।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডের সাথে সাথে সৃষ্টিশীল এই নেতা সাংবাদিকতার সংগেও জড়িত ছিলেন।তিনি ছিলেন তৎকালে বহুল প্রচারিত দৈনিক আজাদে’র কর্মরত সাংবাদিক।……….
২.
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ,আজকের এই দিনে –ইতিহাসের এক বর্বর ফ্যাসিস্ট পশুশক্তি–পাক সেনাবাহিনী নেমেছিলো মানবতার বিরুদ্ধে।লক্ষ্য ছিলো এক জঘন্য অপরাধ সংঘটনের। কালো সেই অভিযানের গাল ভরা নাম ছিলো “অপারেশন সার্চলাইট “।
সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে দখলদার পাক বাহিনী সেনা ছাউনি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে প্রিয় শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের দিকে।বিভিন্ন ইউনিট ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের টার্গেটের দিকে।ঘৃন্য এই হায়েনার দলের অন্যতম টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।বিশেষত আন্দোলনের সূতিকাগার বলে খ্যাত ইকবাল হল এবং জগন্নাথ হল।
রাত এগারোটা বাজতেই আমরা ছেড়ে যাই ইকবাল হল এলাকা।এর কিছুক্ষণ পরেই সেই ইকবাল হলেই পাক সেনাদল আঘাত হানে তাদের সমস্ত হিংস্রতা নিয়ে।
অন্যদিকে অফিসের কাজ শেষে নিজ হলে ফিরছিলেন ছাত্রনেতা-সাংবাদিক চিশতী। তার আর নিজ কক্ষে ফেরা হয়নি। পাক শত্রুবাহিনীর গোলার আঘাতে আরো অনেকের সাথে নিহত হন চিশতী।একজন উদীয়মান ছাত্রনেতা-সাংবাদিকের বর্নাঢ্য জীবন এভাবেই উৎসর্গিত হলো তার প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বেদীমূলে।
৩.
কৃতজ্ঞ জাতি আজ অবনত মস্তকে স্মরণ করছে সেই ভয়াল পঁচিশে মার্চে আত্মাহুতি দেয়া হাজারো শহীদকে।এবছর থেকে এই কালো দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করবে পুরো দেশ।
আজ বেদনার এবং প্রতিরোধের এই দিনে আমরা যেনো ভুলে না যাই শহীদ চিশতীকে–দু:খিনী বাংলার স্বাধীনতাই ছিলো যার আরাধ্য।যার কণ্ঠনি:সৃত
আকাশ -ভেদ করা জয় বাংলা শ্লোগান ছিলো ভবিষ্যৎ বাংলার নিশ্চিত স্বাধীনতার আগাম বার্তা।
চিশতী স্মৃতি অমর হউক।

জয় বাংলা।
রায়হান ফিরদাউস , মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ।