মাদক নির্মূলে পলিসি পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাদকের বিকল্প কিছু একটা সামনে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যালকোহল, মদ ও বিয়ারের উপর ট্যাক্স কিছুটা ছাড় দিলে ড্রাগ সেবন কিছুটা কমতে পারে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানাগেছে। গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনাকালে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু অ্যালকোহল সেবন উন্মুক্ত করার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তবে অ্যালকোহল আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। ওই আলোচনার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, যুব সমাজকে মাদক থেকে সরিয়ে আনতে বিকল্প ব্যবস্থা অবশ্যই দরকার। এলএসডি, ইয়াবা, হেরোইন ক্ষতিকর বিধায়, এগুলো থেকে যুব সমাজকে সরানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
কমিটি সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করার পর মাদক প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, ড্রাগ এবং অ্যালকোহল দুটি ভিন্ন জিনিস। অ্যালকোহলের প্রতি কিছুটা ছাড় দিলে ড্রাগ সেবন কিছুটা কমতে পারে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত ও সুপারিশ প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।
মাদক নির্মূল করতে হলে কিছু পলিসি পরিবর্তন করতে হবে উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, চোরাই পথে আসা মদ ও বিয়ার ঢাকা শহরের সব ক্লাবে বিক্রি হয়। ক্লাবগুলোর বৈধ লাইসেন্স রয়েছে আমদানি ও বিক্রি করার জন্য। কিন্তু ট্যাক্স দিয়ে কেউ আমদানি করে না। মুসলিম দেশ হিসেবে উন্মুক্ত না হলেও কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিলে যুব সমাজকে মাদকাসক্ত থেকে কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ফেনসিডিল-ইয়াবা বন্ধে সীমান্ত এলাকায় অনেক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিধায় নতুন পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।
অ্যাকোহলের ওপর শতকরা ৬০০ ভাগ ট্যাক্স নির্ধারণ করা আছে উল্লেখ করে বৈঠকে আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, ক্লাবগুলোতে অ্যালকোহলের লাইসেন্স থাকলেও কেউ আমদানি করে না। কারণ, ট্যাক্স দিতে হয় বেশি। ক্লাবগুলো বেআইনিভাবে চোরাই পথে আসা মদ বিক্রি করে। যার কারণে দাম কম, ক্রেতা বেশি। এতে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাহলে মদ আমদানির ওপর ট্যাক্স বৃদ্ধি করে কী লাভ হলো। আবার ট্যাক্স কমিয়ে দিলে অথবা মদ উন্মুক্ত করে দিলে ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল আন্দোলনে নেমে যাবে।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমেরিকা ও কানাডা গাঁজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশে মাদক কখনও বন্ধ করা যাবে না। তবে হয়তো কিছু দিনের জন্য কমিয়ে আনা যেতে পারে। কারণ, মাদকের বিকল্প কিছু একটা সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাই অ্যালকোহল, মদ, গাঁজা এগুলো সম্পর্কে আরো চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে তিনি মত দেন।
সংসদীয় কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেন, মদ, বিয়ার বা অ্যালকোহলের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে যদি রাজস্ব বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা-ই করা উচিত। ড্রাগ অর্থাৎ আইস, ইয়াবা, এলএসডি এগুলো ভয়াবহ ক্ষতিকর মাদক। মদ, বিয়ার, গাঁজা ইত্যাদিতে যদি ৫ শতাংশের নিচে অ্যালকোহল থাকে, তাহলে এগুলো বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া উচিত।
সংরক্ষিত আসনের রুমানা আলী বলেন, যেসব মাদক হালকা ক্ষতিকর সেগুলোর ব্যবহার উন্মুক্ত করা যেতে পারে এবং যেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ক্ষতি হয়, সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।
আলোচনা শেষে ৫ শতাংশের নিচে অ্যালকোহলযুক্ত সব পানীয়ের বোতল বা ক্যানে (হান্টার ও গিয়ারসহ) দৃশ্যমান করে অ্যালকোহলের পরিমাণ উল্লেখ করে মুদ্রণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উৎপাদনকারী এবং আমদানিকারকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়।