
বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির লক্ষে ভবিষ্যতে অধিক উন্নত মানের জাহাজ এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম-প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ‘মিডশিপম্যান ২০১৯ আলফা’ এবং ‘ডিইও ২০২১ ব্রাভো’ ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগ- এই ত্রি-মাত্রিক মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে নৌ বাহিনীর সদস্যদেরও সদা প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের পতেঙ্গাস্থ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি’র মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজসমূহকে পোতাশ্রয়ে নিরাপদ জেটি সুবিধা প্রদানের লক্ষে কক্সবাজারের পেকুয়াতে আধুনিক বেসিন সুবিধা সম্বলিত স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলবর্তী এলাকায় নৌ বাহিনীর জাহাজসমূহের অপারেশনাল ও যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ‘শের-ই-বাংলা ঘাঁটি’র নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন নতুন জাহাজ এবং সমরাস্ত্র সংযোজনের পাশাপাশি এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী করার ক্ষেত্রেও আমাদের সরকার কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ঢাকার পদনাম পরিবর্তন করে ‘কমান্ডার ঢাকা নৌ অঞ্চল’ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে পদবি কমডোর থেকে রিয়ার এডমিরালে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। এসময় কুচকাওয়াজ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।
এদিন, প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ৪৪ জন প্রশিক্ষণার্থী কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কাজে যোগদানের সুযোগ লাভ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল চৌকস ক্যাডেটদের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদেরকে পুরস্কারে ভূষিত করেন।
নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ ও জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তোমরা তোমাদের অদম্য আগ্রহ, দৃঢ় মনোবল ও সাহসী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছ। আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনের যে কোন সংকটে তোমরা এ ধরনের সুবিবেচনা ও নেতৃত্বসুলভ গুণাবলীর পরিচয় দেবে।
প্রশিক্ষণকে তিনি সবসময় গুরুত্ব দেন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে যে কঠোর প্রশিক্ষণ তোমরা শেষ করলে তা তোমাদের উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র। আমি আশা করবো তোমাদের দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা তোমাদের অধীনস্থদেরও একইভাবে দেশের প্রয়োজনে আত্মনিবেদনে অনুপ্রাণিত করবে।
নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে তার সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের বিস্তারিত উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, গত নভেম্বর জার্মানি থেকে নতুন একটি এমপিএ বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর এভিয়েশন উইং এ যুক্ত হয়েছে। অপরটি আগামী বছরের মে মাসে যুক্ত হবে। হেলিকপ্টার এবং এমপিএ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত দ্বিতীয় হ্যাঙ্গারের নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ইতোমধ্যে প্যাট্রোল ক্রাফট ও লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ‘ক্রেতা নৌ বাহিনী’ থেকে ‘নির্মাতা নৌ বাহিনী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।