মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষুধা এবং দারিদ্র মুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আর আমাদের সেটাই লক্ষ্য। ’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ বক্তব্য রাখেন। এ সময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

বিজয়ের ৫০তম উদযাপন অনুষ্ঠানে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই উৎসব শুধু উৎসব নয়। এই উৎসব আমাদের পাথেয়, আগামী দিনের চলার পথে প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। ’

টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আজকে সেটা আমরা অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, মাদক নির্মূল করার জন্য আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। আমরা দেশের মানুষের শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চাই। ’

বাংলাদেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ সমান ভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে এবং তারা পালন করছে। সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। ’

সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে বাংলাদেশ উন্নয়নের চাকা সচল রেখেছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছি। যেটা জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্র নীতি দিয়েছিলেন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমাদের দেশের উন্নয়নের চাকা সচল রেখেছি। ’

বিগত বছরগুলোতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশ এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৫০ বছর আমাদের স্বাধীনতার, আমরা কতটুকু এগোতে পেরেছি সেটাই বড় কথা। দারিদ্রের হার আমরা ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগ নামিয়েছি। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ, গৃহহারা মানুষ, ভূমিহীন মানুষকে বিনা পয়সায় আমরা ঘর দিচ্ছি। ইনশাল্লাহ এ লক্ষ্য আমরা পূরণ করতে পারবো, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। ’

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও কোভিড-১৯ অনেকটা আমাদের এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তারপরও করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আবার আমরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। ’

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর থেকে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর থেকেই চেষ্টা করেছি জাতির পিতার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর, ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। পরবর্তীতে আবার ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কিন্তু ২০০৮ সালে আবার নির্বাচনে জয়ী হই। তারপর থেকে এ পর্যন্ত সরকারে থেকে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ’

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা- এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’

আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মানিত অতিথি ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের হাতে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা স্মারক তুলে দেন। পরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত দুটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading