
অনেকেই বলেন বর্তমান সরকারের বিকল্প বিএনপি জামাতের সরকার হতে পারে না।আমিও এ বক্তব্যের সাথে একমত।বিএনপি জামাত আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনটি দৃশ্যপট দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত একটি পুনরুদ্ধার/প্রতিশোধ পর্ব থাকতে পারে। বিএনপি-বিরোধী যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বলপূর্বক তাদেরকে ক্ষমতার বাইরে রেখেছে, দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে ও জেলে পুরেছে বলে মনে হবে তারা দলটির ক্রোধের শিকার হবে।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ফেরত আসবেন। তখন দিনগুলো আওয়ামী লীগ কর্মীদের জন্য সুখকর হবে না। কুঠারের ঘা পড়বে এবং রাজনীতির উর্ধ্বে থাকা সেনাবাহিনী ছাড়া সমাজের প্রায় প্রতিটি সেক্টারে পুনর্বিন্যাস ঘটবে। যেসব আমলা, টকশো এক্টিভিস্ট, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং অন্য যারা বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে এতদিন কাটিয়েছেন তাদেরকে রোষানলে পড়তে হবে।
দ্বিতীয় পর্ব হবে আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে আওয়ামী লীগ অনুগতদের হটিয়ে বিএনপি’র প্রতি সহানুভুতিশীলদের বসানো। এই প্রক্রিয়া পুরনো ও নতুন অনুগত এবং আওয়ামী লীগের আমলে যারা ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে ছিলো তাদেরকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আরেকটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু করবে। ফলে বর্তমান শাসনামলের মতোই আবারো দুর্নীতি, দখলবাজি ও লুটতরাজের প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
অর্থনৈতিক খাতেও একই ব্যবস্থা ও স্বজনপ্রীতির দেখা মিলবে, কিছু নতুন খেলোয়াড় দ্বারা নতুনভাবে তা শুরু হবে। কিন্তু এটা যেহেতু একটি ব্যবস্থা এবং কোন অস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়, তাই এখন সক্রিয় এমন অনেক খেলোয়াড় শুধু আনুগত্য পারিবর্তন করে তাদের খেলা চালিয়ে যাবে। এর মানে হলো অর্থনৈতিক – রাজনৈতিক যোগসূত্রের – শক্তিটি টিকে থাকবে।
বিএনপি কর্মীদের উপর আওয়ামী লীগ যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিও একই কাজ করতে পারে। ফলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। জামায়াতে ইসলামীর অবস্থা ও মর্যাদা হলো উদ্বেগের দুটি জায়গা। এর নেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাই দলটি প্রতিফল চাইতে পারে।তারা হয়তো আবারও তাদের গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে প্রতিহিংসার আগুন জালিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে নিধনে মত্ত হবে।
এটা জাতির জন্য কাম্য হতে পারে না আবার এটাকে জুজুবুড়ির ভয় বানিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অবাধ দুর্নীতি, দুঃশাসন, দখলবাজি,চাঁদাবাজি লুটপাট, ক্যাসিনো সিন্ডিকেট, জনগনকে জিন্মি করে পিয়াজ লবন চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে হরিলুট।ব্যাংক বীমা,শেয়ারবাজার লুট,মেঘা প্রকল্পের নামে মেঘা দুর্নীতিকেও জনগন মেনে নিতে পারে না।।এখন প্রশ্ন জাতির এ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ কি?
জাতিকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের বিকল্প খুজে বের করতেই হবে।আজকে এই দুই বুর্জোয়া রাজনৈতিকদলের একমাত্র বিকল্প হতে পারে একটি গনতান্ত্রিক জাতীয় সরকার। যেখানে সকল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ শক্তির সাথে সামাজিক শক্তির সমন্বয় থাকতে হবে।এদের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে শাসন কাঠামো,আইন বিচার ও নির্বাচন ব্যবস্থায় আমুল সংস্কার আনতে হবে।তবেই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।।আজকে সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি মিলবে না।।
আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ , সাবেক ছাত্রনেতা , এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ।