
সর্বত্র নির্বাচনের উৎসবের আমেজ। পাড়ায় মহল্লা চায়ের দোকান সবখানে জমজমাট আলোচনা। গ্রামীণ জনপদের চায়ের দোকান, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, এখন সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী গুঞ্জন। বলতে গেলে কোন স্থানে ৩ জন থেকে ৫ জন ভোটার একত্রিত হলেই শুরু হয়ে যায় নির্বাচনী আলোচনার ঝড়। নির্বাচন হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এমন একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জনগণ প্রশাসনিক কাজের জন্য একজন প্রতিনিধিকে বেছে নেয়। রাষ্ট্রের নাগরিকগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বাছাই করার সুযোগ পায়।
দিন যেমন বদলে গেছে, তেমনি বদলে গেছে নির্বাচনের স্লোগান। আগে বলা হতো ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ আর এখন বলা হচ্ছে, ‘আপনার ভোট আপনি দিন, দেখে-শুনে-বুঝে দিন।’ আসছে ইউপি নির্বাচন আপনার ভোটের উপযুক্ত কোন প্রার্থী? আপনি কাকে ভোট দিবেন? চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে, কাকে ভোট দিলে এলাকায় শান্তি আসবে। মাদক মুক্ত হবে, গ্রামের মহিলাদের কে বিরক্ত করবে না। স্কুলের ছেলে মেয়েদের আসা যাওয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তা দিবে। এলাকার উন্নয়ন হবে, বর্ষায় যেন আমাদের ভাসাতে না পাড়ে। ভোট আপনার আমানত। আবেগের বশিভুত হয়ে আপনার ভোট যদি ভুল স্থানে দেন তবে মনে রাখবেন এর মাশুল হিসেবে এলাকায়ে দেখা দেবে খুন, চুরি, নেশা, ছেলে মেয়েদের উপর বখাটেদের অত্যাচার । এলাকায় কোন প্রকার উন্নয়ন হবে না। মিথ্যা মামলা এবং হয়রানীর শিকার হবেন।
রাগ করে বা অসুস্থতার কারনে বা ভয়ে অথবা আপনার ভোট কেউ দিয়ে দিবে এই ভেবে আপনার ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা চলবে না। ধোঁয়াশায় ধোঁয়া তোলে স্বার্থবাদীদের কথায় ভুলে, আর নিজেদের সর্বনাশ করবেন না। সবাইকে মনে রাখা দরকার এটা স্হানীয় নির্বাচন। একজন চেয়ারম্যান/ মেম্বার কর্মপরিধি ইউনিয়নের মানুষকে কেন্দ্র করে।
আমরা যারা গ্রামে বাস করি, তারাই সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে উনাদের কাছে যাই। তাই চেয়ারম্যাযন/ মেম্বার অবিভাবকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তার যোগ্যতায় অনেক জটিল ঘটনার সুষ্ঠ সমাধান দেন। এতে করে সমাজে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। আমরাই উপকৃত হই।নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এবং গ্রামের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট প্রদান করা প্রতিটি ভোটারের উচিত। নইলে এর কুফল ভবিষ্যতে আপনাকেই বহন করতে হবে।
মনে রাখবেন কিছু সার্থবাদি রাজনৈতিক ব্যক্তি এ নির্বাচনে প্রার্থীর চেয়ে প্রতিকের কথাই বেশি বলবে। উন্নয়ণের রুপকথার গল্প শুনিয়া আপনার ভোট অযোগ্য, ব্যক্তিত্ত্বহীন, রাজনৈতিক কান্ড জ্ঞানহীন, অপরিচিত ব্যক্তিকে ভোট দিতে বলবে। তাদের কথা মত ভোট দিলে ভবিষ্যতে ঐ নেতার ব্যাপক সার্থসিদ্ধি হলেও আপনি পরে যাবেন বিপদে। মনে রাখবেন পরিবারের অভিবাভক দূর্বল হলে, সে পরিবার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় না।
একজন চেয়ারম্যান/ মেম্বার নির্বাচিত করতে গেলে ভোটাদের যে সমস্ত বিষয় খেয়াল করা অপরিহার্য তা হলো:
১/প্রার্থীর যোগ্যতা ও সহনশীলতা।
২/প্রার্থী রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও নিষ্ঠা।
৩/প্রার্থীর আর্থিক সচ্ছলতা ও সততা।
৪/মানুষের সাথে সম্পর্ক।
আশা করি নির্বাচনের দিন সবাই নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং ভোট উৎসব পালন করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক এই প্রত্যাশা রইল।
পরিশেষে বলবো এটা স্হানীয় নির্বাচন, একজন চেয়ারম্যান/মেম্বার দিয়ে একটা সরকারের কিছুই আসে যায় না। আমরা আমাদের নিজেরদের কথা বিবেচনা করেই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবো। কারো কথায় বা মার্কা দেখে নয়।সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব প্রধানত নির্বাচন কমিশনের, তবে সরকারের সহযোগিতা অবশ্যই হতে হবে ইতিবাচক।
লেখক: আবু জাফর শিহাব (এল এল বি)