“সরকার মুক্ত চিন্তাকে অবরুদ্ধ করে গোটা সমাজ ও দেশকে ক্রমান্বয়ে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। ভোটের অধিকার হরণ করে ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে সমাজে চরম দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের জমিন তৈরী করে আসছে। আগুন নিয়ে খেলতে যেয়ে নিজেদের গায়ে এখন আগুনের আঁচ লাগতে শুরু করেছে। যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকার রাজনৈতিক সমীকরণ থেকে তারা চরম আদর্শহীন, নীতিহীন কৌশল গ্রহণ করেছে, যা দেশের নূন্যতম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো ও সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। অশুভ শক্তির জন্য রাস্তা পরিস্কার করে চলেছে। নানা মহল এই নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। ‘বার বার অপশক্তিগুলো গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করে আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সে অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করেছে সব সময়। আমাদের গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে তার অগ্রযাত্রায়। কিন্তু এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সকল বাধাকে অতিক্রম করে গণতন্ত্রের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করেছে।
“আজকে সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নারকীয় হামলা ভাংচুর তাদের মন্দির ভেঙ্গে ফেলার সাহস তারই বহিঃপ্রকাশ। এঘটনায় শুধুমাত্র নিন্দা জানানো কোন সমাধান হতে পারে না।আজকে দেশের সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিকদল ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ উগ্রবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।বর্তমান সরকারের একটি অংশ তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘতর করতে বারবার এই অপশক্তির সাথে আপোষ করে আসছে যে কারনে তারা আজকে এহেন কাজ করতে সাহসী হতে পেরেছে। এজাতীয় সাম্প্রদায়িক আঘাত করার পরেও ক্ষমতাশীন দলের নেতাদের কারো কারো বক্তব্য সেই আপোষকামীতার লক্ষণ সুস্পষ্ট। তাদের কেউ কেউ হিন্দু পল্লীর বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ও ভাঙ্গার পরেও যখন বলছেন মাথা গরম করার দরকার নেই তখন জনগণ কি ম্যাসেজ পাবে।তবে মাথা গরম আর কখন হবে? মনে রাখবেন কৌশল যদি নীতির ঊর্ধ্বে চলে যায় তখন সে কৌশল স্বাভাবিকভাবেই ব্যর্থ হতে বাধ্য।। দেশের দুই বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের একে অপরের দোষারোপ ও নিরাবতাই আজকের এই পরিনতি।।
আজকে দেশের সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিকদল দাবি তুলেছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করতে সরকারের উচিৎ হবে সেদিক নজর দেওয়া।বাংলাদেশ কিভাবে চলবে সে ফয়সালা ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই সমাধান হয়ে গেছে।কোন ফতওয়া জারি করে এদেশ স্বাধীন হয়নি।এদেশ কারো ফতওয়া দিয়ে চলতে পারে না।বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।১৯৭১সালেও দেশের ৮৫ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর দেওয়া পাকিস্তান রক্ষা ও গণিমতের মালের ফতওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের পক্ষেই রায় দিয়েছিল।
জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যেই বিদ্যমান। পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হিসেবে বাঙালি সামাজিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়েই ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে।বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান, বিকাশ ও ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জীবনে পুনর্জাগরণের ধারায় সংশ্লিষ্ট সকল মৌলিক প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয়েছে। বাঙালি জাতি ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে ‘তৃতীয় জাগরণে’র পথে। এই জাগরণ বাঙালি জীবনে নবতর সামাজিক উপাদান সমৃদ্ধ একটি সুন্দর দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে, অন্যান্য জাতিসত্তার পাশাপাশি বাঙালি জাতিসত্তার উচ্চতর বিকাশ নিশ্চিত করবে।মীমাংসিত বিষয় সমূহ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ইস্যু সৃষ্টি করা জাতির মেধা, মনন ও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আজকের সাম্প্রদায়িক ইস্যু জাতিকে বিভেদ, অনৈক্য ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবার অপচেষ্টা।
সাম্প্রদায়িকমানসিকতা নিয়ে উন্মাদনার সাহস, ভোটের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা, পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস পরিবর্তন, বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করার ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তি আজ এ ধরনের তৎপরতা দেখাতে পারছে। আওয়ামী লীগসহ শাসকশ্রেণি প্রয়োজনে মৌলবাদী শক্তিকে মাঠে নামানো এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার যে কৌশল দীর্ঘদিন ধরে অবলম্বন করছে তা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই পুষ্ট করেছে। যার বিষময় ফল দেশবাসী ইতোমধ্যেই প্রত্যক্ষ করছে। গণমানুষের অধিকার হরণ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা একই সঙ্গে করার প্রেক্ষিতে দেশ আজ মৌলবাদীদের আস্ফালন ও হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার এবং ভোটাধিকারকে অপহরণ করার ফলে সমাজে রাজনীতির প্রবাহমানতা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রের অনুপুস্থিতিতে রাজনৈতিক শূন্যতায় সমাজে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজ অকার্যকর হবার দিকে ধাবিত হবে।সুতরাং বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।আর সেকারণ আজকের অপশক্তিকে রুখে দেবার এখনই সময়।রুখে দাড়াও বাংলাদেশ।।
আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ, সাবেক ছাত্রনেতা , এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading