বাংলাদেশের ভাসানচরের শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে শনিবার একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে জাতিসঙ্ঘ এবং সমঝোতা অনুযায়ী সেখানে মানবিক কার্যক্রমের সমন্বয় করবে জাতিসঙ্ঘ।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ হাজার ৬৪৫ জনের প্রথম দলটিকে ভাসানচরে নিমিত আশ্রয় শিবিরে নেয়া হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
সরকারের লক্ষ্য মোট এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া। কিন্তু জাতিসঙ্ঘসহ নানা সংস্থা শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছিল।
বিরোধিতা করেও রাজি হলো কেন জাতিসঙ্ঘ
শুরু থেকেই জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশকে।
এমন পটভূমিতে শনিবার ভাসানচরের কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘকে যুক্ত করতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলছেন, অনেক দিন দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
তিনি বলেন, এটি যেহেতু বড় বাজেটের ব্যাপার সেজন্য লোকাল এনজিওগুলোই চাইছিল জাতিসঙ্ঘ সম্পৃক্ত হোক।
এনামুর রহমান বলেন, এখন সমঝোতা অনুযায়ী জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা তহবিল সংগ্রহ করবে আর এখন থেকে পুরো মানবিক কার্যক্রমই তারা সমন্বয় করবে। এর আগে চলতি বছরের মার্চে জাতিসঙ্ঘের একটি দল ভাসানচর পরিদর্শনে যায়।
জাতিসঙ্ঘ দলটি তিন দিন সেখানে থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছিল। পরে অন্য কূটনীতিকরাও সেখানে গেছেন।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মহসিন বলেছেন, সবার মূল উদ্দেশ্য হলো মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো কিন্তু এখানে যতদিন আছে ততদিন কিভাবে তাদের ব্যবস্থাপনা হবে সেটিই উঠে এসেছে সমঝোতা স্মারকে।
এ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থার বাংলাদেশে আবাসিক প্রতিনিধি জোহানেস ভান ডে ক্ল বলছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন তারা। এক্ষেত্রে যেসব সংস্থা কাজ করছে তাদের সক্ষমতা অর্জন ও কার্যক্রম সম্প্রসারণে তারা সহায়তা করবেন।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে জাতিসঙ্ঘ ছাড়াও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থাও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয়। তা ছাড়া পরবর্তীকালে ভাসানচর থেকে কিছু রোহিঙ্গার পালানোর খবরও বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর ছিল।
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার যে চেষ্টা করছিল তাতে জাতিসঙ্ঘের আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
‘যতদিন রোহিঙ্গারা যেতে না পারছে ততদিন তাদের অন্তত জীবন জীবিকা যাতে স্বস্তির হয়, ওরা যাতে মানসিক স্বস্তি নিয়ে থাকতে পারে সেজন্যই হয়তো জাতিসঙ্ঘ সম্পৃক্ত হয়েছে-এটাকে আমিও ইতিবাচক অগ্রগতি মনে করি। আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু আমাদের চেষ্টার যেহেতু সীমাবদ্ধ আছে সে জায়গায় জাতিসঙ্ঘ হাত দিলে তাতে আমাদের প্রচেষ্টা যেমন সবল হবে, আবার ওখানে যারা আছে- তাদের মধ্যেও স্বস্তি আসবে।’