অ্যাডভোকেট আনসার খান :বছর-দুএকের মধ্যেই দেশে একটা সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়।আসন্ন এই  নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে।নির্বাচনী তৎপরতার আলোচনার মূল কেন্দ্রে আবারও-“নির্বাচন কমিশন।”

নির্বাচন সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ,সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং ভয়মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠান ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে দেশের নির্বাচন কমিশন।একারণে দেশে সংসদ নির্বাচন আসন্নবর্তী হতে না হতেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো,সচেতন জনগন নড়েচড়ে ওঠেন নির্বাচন কমিশনের সততা,দলনিরপেক্ষতা,স্বচ্ছতা,দক্ষতা এবং প্রভাবমুক্ত থাকা ইত্যাদি নিয়ে হৈচৈ,বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় শুরু হয়ে যায়।নির্বাচন কমিশন নিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকটও তৈরি হয়েছিলো ইতোপূর্বে। গেলো ২০১৮-সালের নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা তো আরও বেশি বিতর্কিত ছিলো।বিরোধী দলগুলো-“দিনের ভোট রাতে” করার অভিযোগ তোলেছিলো কমিশনের বিরুদ্ধে।
       দেশের নির্বাচন কমিশন নিয়ে হৈচৈ,এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে একদম ১৯৭৩-সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সংসদ নির্বাচন থেকেই।পরবর্তী সময়কালে রাজনৈতিক দলগুলো অবিরত দাবি করে আসছে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বিধায় নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।আসন্নবর্তী নির্বাচনেও তেমনটা হতে পারে বলে অনুমিত হচ্ছে।
দেশের সংবিধানের ১১৯(১)অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান,নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।”এ অনুচ্ছেদ প্রমাণ করে যে কমিশন নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষমতা রাখে।তবে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায় নির্বাচন পরিচালনায় সাংবিধানিক ভাবে কমিশনকে একক দায়িত্ব প্রদান করা হলেও অর্পিত দায়িত্ব নির্বাহের জন্য কমিশনকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
সংবিধানের ১১৮(৪)অনুচ্ছেদে যদিও বলা হয়েছে- “দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধানের ও আইনের অধীন হবেন।”
তবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নির্বাচন কমিশন প্রকৃতঅর্থে স্বাধীন নয়-বরং কমিশন দেশের নির্বাহী বিভাগের অধীনে থেকে দায়িত্ব পালন করে বিধায় কমিশনের পক্ষে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না।তাছাড়া সংবিধানে বলা হলেও পাঁচদশকেও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত কোনো আইন তৈরি করা হয়নি যে কিভাবে কমিশন দায়িত্ব পালন করবে।কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ করে রাখার জন্যই আইনটা তৈরি করা হয়নি ৫০-বছরেও।একারণে কমিশন তার দায়িত্ব পালনে নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভর করেই কাজ করে।তাই ইচ্ছে করলেও কমিশন নির্বাহী বিভাগের মতামত উপেক্ষা করে কোনো কাজ করতে সক্ষম নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞজনেরা।
গত পাঁচ দশকে দেশে যত রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে তার সবই নির্বাচনকেন্দ্রিক।ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে যা কিছু করণীয় তার সবকিছুই করে কমিশন নির্বাহী বিভাগের ইশারায়-এমন অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর।কাজেই সংকটের একটা স্হায়ী সমাধানের জন্য নির্বাচন কমিশনের সংস্কার,নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন তৈরি করা সহ কমিশনের সংস্কার ও তার শক্তিশালীকরণের ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এবং সবকটা রাজনৈতিক দল।সচেতন মহলের অভিমত-সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সদস্যদের নিয়োগ দিলেও কমিশন নির্বাহী বিভাগের ওপরই নির্ভরশীল থাকবে যতক্ষণ না কমিশনের জন্য আইন তৈরি না হবে বা কমিশনকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা না হবে।
     ২০২২-সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে এবং এজন্য নতুন কমিশন নিয়োগ করতে হবে।সরকারি ও বিরোধী দলগুলো অবিরত কথা বলে চলেছে নতুন কমিশন নিয়োগ নিয়ে।কিন্তু সমাধানের জন্য সকল পক্ষের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাব্য কোনো আলামত এখনো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।কমিশনের সংস্কার,কমিশনের জন্য আইন প্রণয়ন-সর্বোপরি কমিশনকে দায়িত্ব পালনে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা না গেলে-সার্চ কমিটি হোক বা যে কমিটির মাধ্যমেই হোক-কমিশন গঠন-পূণর্গঠনের নামে ব্যক্তির পরিবর্তন অর্থাৎ বিদায়ী কমিশনের পরিবর্তে নতুন কমিশন সদস্যদের নিয়োগ দিলেও কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতান্তর,মতানৈক্য বা মতভিন্নতা রয়েছে তার সমাধান হবে না বলেই মনে হয়।কারণ শুধুমাত্র কমিশন সদস্যদের পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা দিতে পারে না-যতক্ষণ না কমিশন নির্বাহী বিভাগের ওপর থেকে মুক্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।পরবর্তী আলোচনায় দেখবো কমিশন কতটা নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল।         দেশের নির্বাচন কমিশনের সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে গঠন ও আইনগত দিক থেকেই কমিশনের স্বাধীন সত্ত্বার বিকাশ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে-যদিও সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে দায়িত্ব পালনে কমিশন স্বাধীন থাকবেন।বাস্তবে সংবিধানই কমিশনের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে।কার্যক্ষেত্রে কমিশনের স্বাধীন কোনো অস্তিত্ব নেই।
      সংবিধানের নির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ একত্রে মিলিয়ে পড়লে দেখা যাবে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি দেশের নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল একটা প্রতিষ্ঠানমাত্র।দেশে বলবৎ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত এবং নির্বাহী বিভাগের অনুমোদনে নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে প্রশাসন ক্যাডার থেকে। ফলে সচিব তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকটে দায়বদ্ধ থেকে দায়িত্ব পালন করেন-নির্বাচন কমিশনের নিকট সচিব দায়বদ্ধ নহেন।
      প্রকৃতপক্ষে কমিশনকে দায়িত্ব পালন করতে হয় সংবিধানের ৪৮(৩)-৫৫(৬)-১১৯-১২০ এবং ১২৬-অনুচ্ছেদের বিধানাবলির সমন্বিত প্রয়োগের আলোকে।ওই অনুচ্ছেদগুলো একত্রে মিলিয়ে পড়লে ও ব্যাখ্যা করলেই কমিশনের প্রকৃত দায়িত্ব পালনের এখতিয়ার সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।এসব অনুচ্ছেদে বর্ণিত কমিশনের গঠন-কমিশনারদের নিয়োগ-কমিশন সচিবালয়ের কার্যক্রম ক্ষমতা-আর্থিক আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা- কমিশনের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর কমিশনের এখতিয়ার প্রভৃতি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখলে দেখা যায় যে-কমিশন দেশের নির্বাহী বিভাগের অবিচ্ছেদ্য একটা অঙ্গমাত্র-এর বেশি কিছু নয়।
       কমিশনের গঠন সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদই কমিশনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাহী বিভাগকে।যেমন-সংবিধানের ১১৮(১)অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া এবং রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে যেরূপ নির্দেশ করিবেন,সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে।”
        অর্থাৎ কমিশন কতজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে তার সুস্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই।সংখ্যার সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কতজন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত হবে।ফলে নির্বাহী বিভাগ তার সুবিধা মতো যখন-যেমন মনে করবে তেমন সংখ্যক কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার সাংবিধানিক ক্ষমতা পেয়ে যায়।এধরণের ক্ষমতা যে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে তার উদাহরণ ইতোপূর্বেই রেখেছে দেশের নির্বাহী বিভাগ।
        ২০০৫-সালের ঘটনা সেটা।ওই সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এম.এ.আজিজ এবং অন্য দুজন কমিশনার- অর্থাৎ মোট তিনজন কমিশনার নিয়ে দেশের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিলো।ভোটার তালিকা নতুন করে তৈরি হবে না-কি ২০০১-সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে-তা নিয়ে কমিশন সদস্যদের মধ্যে মতান্তর দেখা দেয়।নির্বাহী বিভাগের ইঙ্গিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নের পক্ষে অবস্থান নিলেও অপর দুজন কমিশনার নতুন ভোটার তালিকা তৈরির পক্ষে ছিলেন না।কমিশনে এমন মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় কমিশনে অচলাবস্থা দেখা দেয়।কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অপর দুজন কমিশনারকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে নতুন ভোটার তালিকা তৈরির আদেশ জারী করলেন।এবিষয়টা উচ্চ আদালতের নজরে নিয়ে আসা হলে-মহামান্য আদালত রায়ের এক পর্যায়ে বললেন-কমিশনের বৈঠক আহবান করে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
      সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হেরে যাবেন-সেটা নিশ্চিত।প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিশ্চিত পরাজয় থেকে রক্ষা করার জন্য কেবলমাত্র শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ করতে নির্বাহী বিভাগ সংবিধানের ১১৮(১)অনুচ্ছেদের সূযোগ-কে কাজে লাগিয়ে সরকারের একান্ত অনুগত নতুন দুজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে।এর ফলে আজিজ কমিশন সরকারের স্বার্থে গণবিরোধী সব কর্মকাণ্ডের দ্বারা গোটা জাতিকে এক অসহনীয় রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত করেছিলো।অন্যদিকে সরকার ১১৮(১)অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করে গোটা নির্বাচন কমিশনকে একটা অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলো।সারকথা হলো এধরনের অনির্দিষ্ট সংখ্যক কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে রেখে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হিসেবে শক্তিশালী করে তোলার কোনো সূযোগ থাকে না।
       সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিধান রয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন দায়িত্ব পালনের অন্তরায় এবং সেকারণে তা খোদ দেশের সংবিধানের সঙ্গেই সংগতিপূর্ণ নয়।এপ্রসঙ্গে কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৪৮(৩)অনুচ্ছেদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে।এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: রাষ্ট্রপতি-কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ব্যতীত অন্যসকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।আবার ১১৮(১)অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করবেন।
      সংবিধানের উপরোক্ত দুটো অনুচ্ছেদ একত্রে মিলিয়ে পড়লে দেখা যায়-যদিও কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে- বাস্তবে কিন্তু ওই ক্ষমতা প্রয়োগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী।প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টির ওপরই নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি কাকে কমিশনার নিয়োগ দেবেন।একারণেই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও কমিশনাররা মূলত প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ হিসেবেই দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকেন।কাজেই এটা বলা যায় যে- কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই কমিশনারদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
      কমিশনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই এর সচিবালয়কে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করে কমিশনের অধীনে নিয়ে আসতে হবে এবং কমিশনের সচিব সহ প্রয়োজনীয় সকল পদে নিয়োগ,পদোন্নতি, বদলি-এসবকিছু কমিশনের এখতিয়ারে ন্যস্ত করতে হবে।এগুলো কিন্তু সরকারের হাতে ন্যস্ত-যা কমিশনের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।যেমন:সংবিধানের ১২০-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে-নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্হা করিবেন।”এখানেও কমিশন সরকারের ওপর নির্ভরশীল।ভারতে কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ,বদলি-শাস্তি বিধানের ক্ষমতা ও অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে।
     আর্থিক দিক দিয়েও কমিশনারগণ সরকারের ওপর নির্ভরশীল।বর্তমান ব্যবস্থায় কমিশনারগণ বেতনভাতা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য পুরোপুরি অর্থ মন্ত্রণালয় ও নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল।একারণেও কমিশনারগণ নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছে-অনিচ্ছের প্রতি নজর রেখেই কাজ করেন বলে কমিশনের পক্ষে স্বাধীন,স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।একটা উদাহরণই যথেষ্ট।তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সাথে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম.এ.সাঈদের মতবিরোধ সৃষ্টি হলে অর্থমন্ত্রী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বেতন বন্ধের নির্দেশ জারী করেছিলেন।এরূপ অবস্থাায় কারো পক্ষে নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করা কী সম্ভব?
     দেশে সুষ্ঠু ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্হা কায়েমের লক্ষ্যে তাই  সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন-সংযোজন করে একটা শক্তিশালী প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সময়ের দাবি।
লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading