নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাঙের ছাতার মতোই দেশের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুমুখী সমবায় সমিতি। এসব সমবায়ের বেশির ভাগই কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে মানছে না বিধিবদ্ধ আইন-কানুন। প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এরা প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনবহির্ভূত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এমনি একটি নাম সর্বস্ব কোম্পানি ইয়েস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ যার প্রতিষ্ঠাতা : মেজর কবির আহম্মদ (অবঃ)।
তার আরেক সহযোগী কিংশুক সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাব্বির আমেদ মাহমুদী। যাকে সম্প্রতি কিংশুক সমবায় সমিতির গ্রাহকের কোটি কোটি আত্নসাতের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমান পাওয়ায় উক্ত প্রতিষ্ঠান বিতাড়িত করা হয়। যার বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
এই দুই বহুমুখী প্রতারকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে লিখিত আকারে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এ.আই.জি ও রাজেন্দ্র ইকো রিসোট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ বজলুর করিম, বিপিএম।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, ইয়েস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ নামক ভুঁইপোড় সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর কবির আহম্মদ মাহমুদী (অবঃ) ও সাব্বির আহমেদ মাহমুদী, সভাপতি: ইয়েস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা এবং তাদের নিজস্ব অর্থায়নে গড়া রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট লিঃ নামক প্রতিষ্ঠানটিও জবর দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এই দুই ধুরন্দর প্রতারক।
কারন অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুরের শালবনের ভেতরে অবস্থিত। ইয়েস মাল্টিপারপাস নামক একটি সমবায় সমিতি নাম মাত্র মূল্যে এখানে প্রায় ৮০বিঘা জায়গা ক্রয় করের। পরবর্তীতে ইয়েস গ্রæপ পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন ও লোভনীয় অফারে এখানে অনেকেই বিনিয়োগ করেন। যারা কেউই ইয়েস গ্রুপ নামক সমবায় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত নয়। রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার গহীনে এর অবস্থান। পরবর্তীতে যারা এখানে জায়গা ক্রয় করেন তাদেরকে বিল্ডিং নির্মাণ করে দিবেন বলে ইয়েস গ্রুপ হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। যদিও উক্ত বিল্ডিং নির্মানে এতটাকা খরচ হয়নি। যাহা ্ইতিমধ্যে তদন্তে প্রমানিত।
রিসোর্টের মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ ও ২০১৭ সাল হতে ওয়াটার ফ্রন্ট প্রজেক্ট এলাকার এবং কটেজ পার্ক প্রজেক্ট এলাকার বিল্ডিং করার জন্য পরিচালকগণ যে অর্থ বিনিয়োগ করেন তার হতে কনস্ট্রাকশন পরীক্ষানতে মোট ফেরৎ যোগ্য অর্থের পরিমান ৯ কোটি টাকা। যাহা ২০১৪ সালে কোন অর্থলগ্নিকারক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে হতো ৯ কোটি টাকা। এবাবদ ইয়েস গ্রæপের নিকট রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট মালিকপক্ষের পাওনা মোট ১৮ কোটি টাকা।
এছাড়া রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট লিঃ ইয়েস গ্রæপকে বিদ্যুতের জন্য প্রদান করেন ৩৯ লক্ষ টাকা। দীর্ঘ এত বছরে তারা বিদ্যুতের বিষয়টি সুরাহা করতে পারেননি। এই টাকা অন্যকোন অর্থলগ্নিকারক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে তারা পরিমান হতো প্রায় ৭৩ কোটি টাকা।
মালিক পক্ষদের বোকা বানিয়ে ইয়েস গ্রæপ উক্ত রিসোর্টটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় এবং শর্তনুযায়ী প্রতি বৎসর বিল্ডিং মালিকদের লাভের প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ইয়েস গ্রুপ এখান থেকে প্রতি বৎসর কোটি টাকা কামালেও মালিক পক্ষদের দেখিয়েছেন শুধু লোকসান আর লোকসান। যদিও রিসোর্টের আয়ের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী এখানে কখনো লোকসান হয়নি। ইয়েস গ্রুপ তাদের সাথে প্রতারনা করে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
এক পর্যায়ে মালিকপক্ষ ইয়েস গ্রুপের চল চাতুরামি বুঝতে পেরে নিজেরাই রিসোট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮টি বিল্ডিং এর মালিকপক্ষদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট লিঃ’।
এতেই বাধ সাজে ইয়েস গ্রুপ। নিজেদের অংশদারিত্ব না থাকলেও অনৈতিক ভাবে রিসোর্টটি জবর দখলের পায়তারা করছে তারা।
মালিক পক্ষের সাথে জানা যায়, আমরা রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের পরিচালকগন, কেউই উক্ত ইয়েস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি-এর সদস্য বা সদস্যা নই। ইয়েস গ্রæপ আমাদের মত নিরপরাধ, কোমলমতি ব্যক্তিদের কাছ হতে কোটি কোটি টাকা অর্থ সংগ্রহ করে আমাদের সাথে প্রতারণা করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সমবায় অধিদপ্তরের নিয়মনিতি উপেক্ষা করে প্রতি বছর অনুমোদিত ফার্ম কর্তৃক সার্টিফাইড আয়ব্যয়ের কোন হিসাব নিকাশ প্রদান না করেই বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের ইচ্ছামত মনগড়া হিসাব বিবরনী প্রদর্শন করছেন, যাহা মিথ্যা ও জালিয়াতিপুর্ন। ইয়েস গ্রুপের অভিনব প্রতারনা ও সাধারন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি আমানত সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। যাহা ইতিমধ্যে তদন্তধীন।
এই বিষয়ে সিমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে জেনে আপনাকে জানাতে পারবো। তবে কোন সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
জানা যায়, প্রতারক এ চক্র মেজর কবির ও তার সহোদর রিসোর্টে বিনোয়োগকৃত অর্থ অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করে ধল্যাপাড়ের সুখ কম্যুনিটি ভিলেজ, হেমায়েতপুর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, জমি ক্রয় ও অবকাঠামো নির্মাণ করেন- উত্তরা থ্রি ইন ওয়ান প্রজেক্ট বিনিয়োগকারীদের অর্থে ক্রয় করে, বিনিয়োগকারীদের না জানিয়ে সমস্থ অর্থ আত্মসাৎ করে। এছাড়াও রিসোর্টের বিল্ডিং সহ প্লটের প্রকৃত ব্যয়ের অনেকবেশী অর্থ প্রাপ্তির পরই এ প্রতারক চক্র তাদের সাব-কাবলা দলিল করে দেন।
এ প্রতারক চক্রের কাছে হার মেনেছে বিভিন্ন ব্যাংকসহ অনেক বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের অন্তর্গত বারুইপাড়ায় অবস্থিত “রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট ” এর জমি (যার বিপরীতে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে গাজীপুর মামলা চলমান রয়েছে) বন্ধক রেখে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিঃ ব্যংকের গুলশান শাখা থেকে ঋন সুবিধা গ্রহণের জন্য একটি আবেদন করেন বলে জানা যায়। উক্ত ৮ কাঠা জমি রেজিষ্ট্রি না দেয়ায় ইয়েস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যথাক্রমে ১। মেজর ( অবঃ ) কবির আহম্মদ মাহমুদী ২। এস.এ মাহমুদী শাব্বির এর বিরুদ্ধে “ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালত গাজীপুর এর বরাবর পরিচালকগণ দেওয়ানী মকোদ্দমা নং ৪৪১/১৯ ও দেওয়ানী মকোদ্দমা নং ১১৫/২১ দায়ের করেছেন রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট লিঃ কর্তৃপক্ষ।
এ প্রতারক চক্র রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে মালিক পক্ষদের বিনিয়োগকৃত অর্থ অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করে তার গ্রাম কাপাসিয়ায় প্রায় টাকা ২,০০,০০,০০০/- (কথায় দুই কোটি টাকা) খরচ করিয়া আলিশান নতুন বাড়ি তৈরি করেছেন। এই বিষয়ে ইয়েস গ্রুপের চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।