
ডিবি পুলিশ বা র্যাবের বিশাল বাহিনী যেই ধরপাকড় করে, সেইটারে পুলিশী রেইড কওয়া যায়, ওয়ারেন্ট বাদেই বাহিনী নিয়া বা সাদা পোশাকে অমুক তমুকের বাড়িতে রেইড দেয়া, তুইলা নিয়া যাওয়া, গুম করা কিংবা ডিবি পুলিশের বা র্যাবের কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় আটক রাখা – এইসব কিছু নিয়া বড় আপত্তির জায়গা আছে, বিভিন্ন রেইডে গায়েবি এলএসডি, ইয়াবা, ইত্যাদি পাওয়া রাস্তাঘাটে পুলিশের গাঞ্জা গুজায় দেয়া- এইসব নিয়াও মেলা আপত্তির জায়গা আছে, বাট এইসবের কোনকিছুরে মোরাল পুলিশিং কওয়া হইতেছে না … এইসবই হইতেছে পুলিশী তাণ্ডব, বা কইতে পারেন পুলিশিং! স্বৈরতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্ররে আবশ্যিকভাবেই পুলিশী রাষ্ট্র হইতে হয়, এইসব হইতেছে সেই পুলিশী রাষ্ট্রের পুলিশী তাণ্ডব!
তাইলে মোরাল পুলিশিং কোনটা?
রাষ্ট্রীয় বাহিনী যেইভাবে মিডিয়ারে সাথে নিয়া মডেলরে/ নায়িকারে ডেমোনাইজ করছে, “মদের আসর বসায়”, “ব্লাক মেইলিং করে”, “রাতের রানী”, “পর্ণোগ্রাফি বানায়” – এইসব কথাবার্তা ছড়ানোর মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্র, মিডিয়া থেকে শুরু করে, সামাজিক মাধ্যমের লাখ লাখ পাবলিক যেইভাবে ট্রায়াল কইরা ফেলাইতেছে – সেইটারে কওয়া হয় মোরাল পুলিশিং! মদ, নারী ও যৌনতা নিয়া মুমিন পাবলিকের মধ্যে যেইরকম ট্যাবু আছে, যুগপৎ নিষিদ্ধ আকর্ষণ ও ঘৃণা আছে – সেইটাই নানান সময়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে- তার চালানো তাণ্ডবের পক্ষে পাবলিক সেন্টিমেন্টরে কাছে টানতে! সেই জন্যেই পলিটিকাল অপোজিশনরে অবৈধ ভাবে আটকের সময়ে এইসব মদ পাওয়া যায় ও মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়, খালেদা জিয়ারে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময়েও প্লেবয় ম্যাগাজিন পাওয়া, সেইটা নিয়া মিডিয়ায় রসায়া রসায়া আলাপ করা হয়! — এইসব কিছুই আসলে আইনের এখতিয়ার বহির্ভুত, পাবলিকরে মোরাল পুলিশ এর ভূমিকায় আবির্ভুত করতেই পুলিশ ও মিডিয়া এইসব প্রচার করে! অভিযুক্তরে কোনভাবেই পুলিশ-র্যাব পাবলিকলি ডিরেইল করবার পারে না, আটককৃতর সামাজিক মর্যাদা ফালতু অভিযোগ তুলে নষ্ট করতে পারে না! পুলিশী রাষ্ট্রের ফালতু আইন অনুযায়ী পরোয়ানা বাদে কারো বাসায় অভিযান চালানি জায়েজ হইলেও, মুমিন রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী মদ রাখা, খাওয়া মুসলমানদের জন্যে (আইনে আছে- মুসলমানরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বাদে এলকোহল খাওয়ার অনুমতি পাইবো না) অপরাধ হইলেও – অভিযুক্তকে রাষ্ট্রীয় ঠেঙ্গারে বাহিনী কর্তৃক এমনে ডেমোনাইজ করা আইনের এখতিয়ারবহির্ভুত বা বেআইনি।
পরীমনির ক্ষেত্রেও এই কামটা হইছে … পরীমনির বাসায় মদ পাওয়া গেছে, এবং সেই কারণে গ্রেফতার করা হইছে! গুড, তাইলে তারা কেবল সেইটাই বলবে, কেননা আইন অনুযায়ী সেই এখতিয়ার তাগো আছে। কিন্তু, রাতের রানি কইতে পারে না – এমনকি যদি সে বা পিয়াসা – মৌরা রাতের রানী হয়ও বা ডিজে পার্টি করেও, বিত্তবানদের নিয়া মদের আসরও বসায় … এইসবের কোনকিছুই কোন আইনেই অপরাধ না! এমনকি, ব্লাক মেইলের আলাপটাও তারা করতে পারে না- কোন প্রমাণ বা কারো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা না থাকলে! পর্ণোগ্রাফি বানানির সাথে যুক্ত এইটাও নিশ্চিত প্রমাণ বাদে মিডিয়ায় কইতে পারে না! সেক্স টয়, বেল্ট – এইসব পাইলেও সেগুলা মিডিয়ায় ফলাও কইরা জানাইতে পারে না (এক জায়গায় অবশ্য দেখলাম- এগুলা নাকি রাজের বাড়িতে পাইছে- অথচ মিডিয়া সেগুলারে পরীমনির নামে চালাইছে) … এইসব কিছুর উদ্দেশ্যই হইতেছে- পাবলিকরে মোরাল পুলিশিং এ উদ্বুদ্ধ করা …
যেকোন পুলিশী রাষ্ট্র টিকে থাকার বড় হাতিয়ার হইলো পাবলিকের মধ্যে সম্মতি উৎপাদন করা। সেই কারণেই যেকোন পুলিশী তাণ্ডবের পক্ষে তারা পাবলিকরে মোরাল পুলিশিং এর ভূমিকায় অবতীর্ণ করবার চায়! তাদের সবচাইতে বড় টুল হইতেছে আমাগো বশংবদ ধ্বজভঙ্গ মিডিয়া! ক্রসফায়ারে মানুষ মারার সাথে সাথেই সেই খুন হওয়া মানুষটা কত বড়, কত কুখ্যাত সন্ত্রাসী – অপরাধী ছিল সেইটা ব্রিফিং কইরা জানায়, মিডিয়া ইতিহাস রচনা কইরা ফেলে! কাউরে ধরলে, কারোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাইলে – পাবলিকলি সমর্থন আদায়ের বড় উপায় হইতেছে, আটককৃত বিরুদ্ধে পাবলিকরে মব ট্রায়ালে উদ্বুদ্ধ করা, মোরাল পুলিশিং এ উদ্বুদ্ধ করা! সেইজন্যে মদ ও নারী খুব ভালো জিনিস! পুরুষ কাউরে ধরলে পাওয়া যায়, সারি সারি মদের বোতল – সেই সাথে থাকে গায়েবি ইয়াবা, এলএসডি ইত্যাদি। আর তার লগে যদি কয়েকটা নারীকে পাওয়া যায়, তো কথাই নাই! সেই নারীগো কে কেন কোন কারণে সেই বাসায় ছিল তা জানবার দরকার নাই, চোখ বন্ধ কইরা সবাই হইয়া যায় “রক্ষিতা”! তাতেই চলবো, মিডিয়া রসায়া রসায়া খবর ছাপাইবো বা দেখাইবো, আর অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে চলবো- মব ট্রায়াল! আর, আটক কৃত কেউ যদি হয় নারী, তা প্রাক্তন বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হউক আর হালের আকর্ষণীয় মডেল বা নারী; তাইলে তো কথাই নাই! কারোর বেডরুম থেকে মিলে গায়েবি প্লেবয় ম্যাগাজিন, কারোর বা গায়েবি সেক্স টয়! প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়া তো মোরাল পুলিশিং, রসালো গসিপিং – এইসব শুধু তো সোশাল মিডিয়া বা প্রিন্ট/ ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এক্কেবারে জাতীয় সংসদেও সেগুলা ডালপালা মেলে!
সোশাল মিডিয়াতে গত কয়দিন ধইরা পরীমনি ও অন্যদের নিয়া যা যা হইতেছে – এইসবরেই কয় মোরাল পুলিশিং! এই জিনিসটা এমনই ভয়ংকর যে, পুলিশী রাষ্ট্রের যাবতীয় পাপ এইখানে আইসা মুইছা যায়! আওয়ামী – বিএনপি – জামাতি – কতিপয় বাম, সবার মাঝে দারুণ ঐক্য তৈরি হইয়া যায়! পুলিশী তাণ্ডব, র্যাব নামক ঠেঙ্গারে বাহিনীর নিবর্তনমূলক উপস্থিতি – সবকিছু ভুইলা তাদের এইসব অভিযানের পক্ষেই সম্মতি উৎপাদিত হইতে থাকে! এমনে কইরাই, একটা পুলিশী রাষ্ট্র তার জনগণরে, মিডিয়ারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমরে স্রেফ টুল বানাইয়া নিজেগো স্বৈরশাসনরে জায়েজ বানায়া ফেলে! এমন কইরাই – পুলিশী রাষ্ট্র পাবলিকরেই তাগো অন্যায় – অত্যাচার – নিপীড়ন – জুলুমের পার্ট বানাইয়া ফেলে! পুলিশী রাষ্ট্র টিকাইয়া রাখতে এই মোরাল পুলিশিং খুব জরুরী এক টুলই বটে!
ছবি ক্রেডিটঃ শহিদুল আলম। মডেলঃ রেহনুমা আহমেদ। মোরাল পুলিশিং এর বিরুদ্ধে তাদের এক্টিভিজমের প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা। এই ছবিটা নানাভাবেই স্ট্রাইকিং, মদের বোতলে রিকশা আর্ট আর পাছা কাটা কলমকে সিগারেটের ভঙ্গিতে ধরা- সবই অন্যরকম দ্যোতনা তৈরি করেছে! অনুপম সৈকত শান্ত ।
শহিদুল আলমের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।