নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ‘টাকা দিয়ে তো জীবনের ক্ষতিপূরণ হবে না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এই টাকাটা পেলে উপকৃত হবে। পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের পরিবারের সদস্যদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। আহত শ্রমিকদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ দিতে হবে।

শ্রমিকরা আমাদের চলমান রাখে, রাষ্ট্রকে ভালো রাখে, তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে- এমনটা উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থা না নিলে যা হয় তাই হয়েছে। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যদিও কেউ হত্যা করেনি। সরকারের একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভাগ আছে, তাদের পরিদর্শক প্রতিনিয়ত কল-কারখানায় এসে দেখার কথা। তারা এখানে এলে বুঝতে পারত কোথায় কোথায় গাফিলতি আছে। দুর্নীতির ফলে তারা আসে না।’

আজ রোববার দুপুরে কয়েকজন প্রতিনিধিসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সময় তিনি অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের স্বজনের সঙ্গেও কথা বলেন। তাদের সান্ত্বনা দেন এবং তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানান।

সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে যেভাবে মৃত্যু ঘটছে তাতে এই সরকার ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত না। ন্যায়নীতি না থাকলে, আইন না মানলে এইসব দুর্ঘটনা থামবে না। আমাদের সবার জন্য দুঃখ আছে, জাতির জন্য দুর্ভোগ আছে। এতগুলো জীবন গেল তার মূল্য কে দিবে? এর দায়-দায়িত্ব সরকারের।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে আমাদের জীবন ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পরিদর্শক কমিটিতে দুজন নিরপেক্ষ পরিদর্শক থাকতে হবে। তারা সাংবাদিক, বিশিষ্ট নাগরিক বা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন। যারা আর্থিক লেনদেনে জড়িত হবেন না। নিরপেক্ষ পরিদর্শক থাকলে মিথ্যাচারটা কম হবে। এটা সংস্কার হবে, জনগণের জীবন রক্ষা পাবে।’

গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের জাতীয় সক্ষমতা তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এমন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ার দরকার ছিল, যার মাধ্যমে সব কলকারখানা নিয়ম মেনে হবে এবং সেখানে যারা কাজ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করল না। গার্মেন্টসের বাইরে এদেশে যত কল-কারখানা আছে সব একই রকম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সেখানে যেকোনো মুহূর্তে আগুন, ভবন ধ্বসসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মো. ফরিদ উদ্দিন, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লা, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading