বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পথ সুয়েজ খাল এক সপ্তাহ আটকে রাখা জাহাজ এভার গিভেনকে মুক্তি দিয়েছে মিসর। বুধবার মালিক প্রতিষ্ঠানের সাথে মিসরীয় সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের সমঝোতার পর জাহাজটিকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর আগে গত মার্চে বিশ্বের বৃহত্তম এই বাণিজ্যিক জাহাজটি সুয়েজ খালের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়ে আটকে পড়ে। টানা এক সপ্তাহ আটকে থাকার পর জাহাজটি মুক্ত হওয়ার পর ক্ষতিপূরণের দাবিতে এটিকে জব্দ করে মিসর।
জাহাজটির জাপানি মালিক প্রতিষ্ঠান শোয়েই কিসেন জানিয়েছে, জাহাজটিকে প্রথমে মিসরের ভূমধ্যসাগরীয় পোর্ট সাইদ শহরে নিয়ে গভীর পরীক্ষণ করা হবে। পরে তা পরবর্তী বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে।
বুধবার সুয়েজ খালের তীরবর্তী ইসমাইলিয়া শহরে খাল কর্তৃপক্ষের সাথে শোয়েই কিসেনের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাহাজটিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
জাহাজটিকে ছেড়ে দিতে মালিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতায় আসার জন্য খাল কর্তৃপক্ষের প্রতি মিসরীয় এক আদালতের আদেশের পর এই সমঝোতা চুক্তিতে এলো উভয় কর্তৃপক্ষ।
তবে সমঝোতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে জাহাজটি জব্দ করার পর ক্ষতিপূরণ বাবদ সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ মালিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার (সাত হাজার সাত শ’ ৮৭ কোটি টাকা) দাবি করে। পরে তা কমিয়ে ৫৫ কোটি ডলার (চার হাজার ছয় শ’ ৭৫ কোটি) টাকা নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, শোয়েই কিসেন কোম্পানি ক্ষতিপূরণ বাবদ সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষকে একটি ট্যাগবোট দিয়েছে।
মিসরীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়, ফুলের তোড়া ও ফলকে সাজানো জাহাজটিতে ক্যাপ্টেন ও অন্য ক্রুরা উপস্থিত রয়েছেন।
শোয়েই কিসেনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কার্গোটি আটকে যাত্রা বিলম্ব হওয়ায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
গত ২৩ মার্চ পানামার পতাকাধারী চার শ’ মিটার দীর্ঘ এভার গিভেন জাহাজটি সুয়েজ খালে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়ে আটকে পড়ে। ১৯৩ কিলোমিটার (১২০ মাইল) দীর্ঘ সংকীর্ণ এই খালের দক্ষিণ প্রবেশপথ সুয়েজ বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার (তিন দশমিক সাত মাইল) উত্তরে জাহাজটি আটকে পড়ায় সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওই সময় সংকট তৈরি হয়েছিল।
পরে প্রায় এক সপ্তাহের চেষ্টার পর ২৯ মার্চ ২০ হাজার টন ওজনের জাহাজটিকে আটকে থাকা অবস্থা থেকে মুক্ত করে আবার ভাসাতে সক্ষম করে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই জাহাজটিকে জব্দ করে রাখা হয়েছিল।
সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিসরের নিয়ন্ত্রণাধীন সুয়েজ খাল গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক এই সংযোগ পথে মোট বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১২ ভাগ পণ্য সরবরাহ করা হয়।
সূত্র : আলজাজিরা