হতাশা এড়িয়ে সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবন পেতে শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে সকালে হাঁটার অভ্যাস আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক ভালো কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় শারীরিক কাজকর্ম বেশি করলে সেটি মেজাজ ভালো রাখতে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে এবং নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করে পেতে পারেন প্রচুর মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটাচলায় তুলনামূলকভাবে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত হতাশার ঝুঁকি কমে।

জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি বলছে, চিন্তাভাবনা এবং ধারণাকে সৃজনশীল করতে সহায়তা করে সকালের হাঁটাচলা।

এ ছাড়া ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের চিন্তাভাবনা, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিকভাবে উন্নত করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটাচলা।

তাই আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুখের করে তুলতে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করে তুলুন। এ জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সকালে হাঁটতে হবে। সহজ এ অভ্যাসে আপনি বৃদ্ধি করতে পারেন দৈনন্দিন জীবনের সুখ এবং জীবনকে করতে পারেন আরও উপভোগ।

সকালে হাঁটার অভ্যাস করতে জানুন কিছু টিপস–

১. অফিসে হেঁটে যাওয়া
অফিসে বা কাজে হেঁটে যাওয়া অনেক ভালো একটি উপায়। এটি সকালে হাঁটার অভ্যাসের পাশাপাশি কাজের জায়গায় গিয়ে আপনাকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

‘প্রিভেন্টিভ মেডিসিন’র প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, কাজে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে গেলে সেটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।

এ ছাড়া ‘ইট দিস ডট কম’ ওয়েবসাইটের এক গবেষণায় অ্যাংলিয়াস নরউইচ মেডিকেল স্কুলের প্রধান গবেষক অ্যাডাম মার্টিন বলেন, যারা গাড়িতে যাতায়াত করেন, তাদের মানসিক সুস্থতা বেশি খারাপ হয়। আর যারা বেশি হাঁটেন, তাদের মানসিক সুস্থতা ততই ভালো হয়।

২. প্রকৃতিতে হাঁটা
কোনো উদ্যান বা পার্কে অথবা প্রকৃতি আছে, এমন জায়গায় হাঁটার অভ্যাস করুন। প্রকৃতিতে হাঁটাচলা করলে সেটি আপনাকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে ও হাসিখুশি থাকতে সাহায্য করবে।

জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি অব প্রসিডিংসের প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতিতে অল্প কিছু সময় কাটালেও সেটি স্বাস্থ্যের উপকারে অবিশ্বাস্য ভূমিকা রাখে। পানির শব্দ ভালো আবেগ ও স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এবং পাখিদের শব্দ চাপ থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।

৩. পানির পাশে হাঁটা
আপনার কাছাকাছি কোনো সৈকত, হ্রদ বা নদী থাকলে চেষ্টা করুন সেখানে গিয়ে হাঁটতে। কারণ পানির কাছাকাছি হাঁটলে সেটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ও মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৪. হাঁটার সময় সদয় থাকা এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা
জার্নাল অব হ্যাপিনেস স্টাডিজের একটি গবেষণায় তারা একদল স্বেচ্ছাসেবককে হাঁটার সময় তাদের সামনে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে তিনটি কৌশল মেনে চলতে বলেন। প্রথমটি হচ্ছে— তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভালোবাসা-দয়া রাখা; দ্বিতীয়টি হচ্ছে— পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে— কৌশলে বলা হয় অন্যান্য লোকদের বাহ্যিক উপস্থিতি এবং চেহারা বিবেচনা করতে। গবেষণাটিতে দেখা যায়, এ কৌশলগুলো অবলম্বন করার ফলে তারা কম উদ্বেগ, আরও সুখী, আরও সংযুক্ত, আরও যত্নশীল এবং আরও সহানুভূতি অনুভব করে।

তাই আপনি হাঁটার সময় যাদের মুখোমুখি হবেন, তাদের সঙ্গে সদয় ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করুন। এ কৌশলগুলো আপনাকে আরও ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading