
ভারতের সাথে বাংলাদেশের “আম কূটনীতি” ও অতীতের দেয়া নেয়ার সালতামামী ৷
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পুনঃনির্বাচিত পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ২৬০০ হাজার কেজি হাড়িভাঙ্গা আম পাঠিয়েছেন ৷ উপহার দিতে কিংবা, কোন উপহার পেতে ভাল লাগার গল্পটা রাষ্ট্রীয় আচারে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে ৷ তাই ফলের রাজা রসালো আম, কূটনীতির হাতিয়ার হয়েছে বারবার ৷সেজন্যই ফলাফল হিসাব করার সময় এসেছে সঙ্গত কারনেই ।
খুব নিকট অতীতে অগ্রিম টাকা প্রদান করেও চরম বিপদের সময়, ভারতের সেরামে উৎপাদিত করোনার টিকা বাংলাদেশ পায়নি ৷ ভারতের খোঁড়া যুক্তি ছিল তাদের এখন প্রযোজন, তাই তারা দিতে পারবেনা ৷ তাহলে তিন কোটির জন্য অগ্রিম টাকা নিয়ে, ৭০ লাখ সরবরাহ করার পর বাকী টাকা বাংলাদেশকে ফেরত দিয়েছে এ রকম কথা কোথাও শোনা যায়নি ৷ তেমনভাবে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিভঙ্গের বিরুদ্ধে কোন মামলা ত দূরের কথা, এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেয়ার কথাও শোনা যায়নি ৷
পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে হিন্দু মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট মোদীর দলকে পাইয়ে দেয়ার জন্য, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীকে কলঙ্কিত করে সফরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ৷ সেই নির্বাচনের ফল মোদীর পক্ষে যায়নি ৷ অপরদিকে সফরের বিরোধিতায় জীবন গেছে মানুষের, হয়েছে সম্পদের সীমাহীন ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ ৷
ট্রানজিটের একতরফা চুক্তিতে ভারতের লাভের পাল্লাভারী হয়েছে ৷ সচিব কমিটির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণকে পাশ কাটিয়ে চুক্তি হয়েছে অবিশ্বাস্য কম মূল্যে ৷ অবকাঠামো, সড়কপথের যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে তার দায় কে নিবে ? অপরদিকে নেপাল ও ভূটানে মালামাল পরিবহনে বাংলাদেশের জন্য ট্রানজিটের বাধা অপসারণ করা হয়নি ভারতের পক্ষ থেকে ৷
স্বাধীনতার পর অর্ধ শতাব্দীতে ভারতের কেন্দ্র অথবা প্রতিবেশী রাজ্যে যারাই শাসনকর্তা ছিলেন, কেউই বাংলাদেশের সাথে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেনি ৷ চীন,পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, বার্মার সাথে ভারতের সীমান্ত থাকলেও মানুষ হত্যা করা হয় শুধু
বাংলাদেশের সীমান্তে ৷ প্রয়োজনের সময় পানি বন্ধ রাখা আর নিত্যপণ্যের চালান বন্ধ রাখা নিয়মিত চিত্র ৷
ফারাক্কার স্বাভাবিক পানি প্রবাহর বিষয়টি নিয়ে কোন আলোচনা এখন অতীত কথন ৷ তিস্তা সহ অন্যান্য নদীর পানির নায্য হিস্যার জন্য যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক ছয় মাস অন্তর নিয়মিত বসার কথা ৷ শেষ কবে হয়েছে স্মরণ করতে মন্ত্রী মহোদয়ের নথি দেখে বলতে হবে। এই অনিয়মিত বসার পুরো লাভটাই ভারতের পক্ষে যায় ৷ ভারতীয় ঋনের কত শতাংশ কাজ হয়েছে তার পাওয়া হিসাবের চিত্রটিও করুন ৷ রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রে চুক্তিভঙ্গ করে নিম্নমানের ভারতীয় কয়লা আমদানীর খবর তাদের মিডিয়াতেই প্রকাশ হয়েছে ৷
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোতে অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক সকল চুক্তির বিষয়ে সংসদকে অবহিত করতে হয় ৷ যৌক্তিক তর্ক বিতর্কর মধ্য দিয়ে তা অনুমোদন নিতে হয়। নিশিরাতের নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হয়েছে, সেখানে গৃহপালিত ও তথাকথিত করুন বিরোধীদল দেখি,কিন্তু কোন কার্যকর আলোচনা দেখিনা ৷ যে ওয়াচডগ হিসেবে শক্তিশালী গণমাধ্যম এদেশে অতীতে ছিল, সেটা এখন সুখস্মৃতি ৷ তাদের কলমের সেরকম কার্যকারীতা হারিয়ে গেছে ৷
আম কূটনীতির আলোচনা করতে যেয়ে সাতকাহন কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ছিলনা ৷ পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ভারত কোনদিনই আন্তরিক ছিলনা ৷ ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসক গোষ্ঠী
তাদের দেশের দলিত, বিভিন্ন সংখ্যালঘু ধর্মীয়গোষ্ঠী, উপজাতির যেমন কোন সময়েই উপকারে আসেনি ৷ তেমনভাবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বিষয়েও একই আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারনে সৎ প্রতিবেশী সুলভ আচরণও করেনি ৷
‘আত্মসম্মানবোধ, দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য মানসিক যে শক্তির দরকার, তার অভাব দেখলেই প্রতিবেশী তার অশুভ আগ্রাসনের হাত বাড়ায় ৷ সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহীর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে হীনমন্যতার জন্ম নিবে সমগ্র জনগনের মধ্যে ৷ মানসিক পরাধীনতা, একটা জাতিকে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যায়, তখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা ৷
সেজন্য আম কূটনীতি করে হাড়িভাঙ্গা আমের নামটা প্রচার হবে, আমের নতুন ব্র্যান্ডিং হবে ৷ কিন্ত নায্য চাওয়া পাওয়ার হিসাবটা, শেষ পর্যন্ত শুন্যই থাকবে ৷

লেখক – ইফতেখার আহমেদ বাবু