দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় ছেলের লাশ হাসপাতালের মর্গে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন হতদরিদ্র এক বাবা। একাধিকবার টাকা দিয়েও সর্বশেষ দাবি করা ১০ হাজার টাকা দিতে না-পারায় দিন শেষে লাশ সন্ধ্যায় দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। সারাদিন অপেক্ষার পর ছেলের লাশ না-পেয়ে মর্গের সামনেই বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন কমল প্রামানিক। তিনি পেশায় ভ্যান চালক।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুর উপজেলার গাছিরদিয়া গ্রামের টলটলিপাড়ার কমল প্রামানিকের ছেলে শান্ত (১৩) গত ১২ জুলাই আত্মহত্যা করেন। মায়ের ওপর অভিমান করে কীটনাশক পান করেন তিনি। রাতে পরিবারের লোকজন শান্তকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক শান্তর মরদেহ মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
কমলের অভিযোগ এরপর ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে মর্গের ডোম লক্ষণ ও হীরা লাল তার কাছে টাকা দাবি করে বলেন, বুকের অর্ধেক কাটলে ৫ হাজার, পুরো কাটলে ১০ হাজার লাগবে। না হলে লাশ কাটা হবে না। এ সময় তাদের অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কমল ছেলের লাশ পোস্টমর্টেম করাতে পারেননি।
কমলের অভিযোগ এ সময় তিনি উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা চেয়েছেন। অনুরোধ করে বলেছেন, ‘ভাই আমি গরিব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে খাই। এতো টাকা দেয়ার ক্ষমতা আমার নাই।’
এই প্রতিবেদককে কমল বলেন, ‘রাতে লাশ মর্গে ঢোকানোর সময় পাহারা দেয়ার কথা বলে ১৫শ’ টাকা দাবি করে দুজন ডোম। ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে ওদের দিয়েছি। এরপর রাতে বাড়ি চলে যাই। সকালে আসার পর বলছে আরো টাকা লাগবে। তখন সাতশ টাকা দিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও বিভিন্ন খরচের কথা বলে আমার কাছ থেকে ১,৫৫০ টাকা নিয়েছে ওরা।’
মৃত শান্তর চাচা মামুন বলেন, সংবাদ শুনে দুপুরে আমি হাসপাতালের মর্গের সামনে এসে দেখতে পাই, দুই ডোম এবং একজন পুলিশ সদস্য টেবিলে বসে সিগারেট খাচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে শান্তর বাবা টাকা নিয়ে কথা বলছেন। এ সময় আমি মোবাইলে ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা টের পেয়ে ভিডিও করতে দেয়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মর্গে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল হাবিব জানান, তার সামনেই ডোমরা টাকা দাবি করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডোম লক্ষণ বলেন, ‘এখানে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।