রোহিঙ্গাদের টিকা দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে ভ্যাকসিন ডোজ আসার অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও মার্চের শেষের দিকে এ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় সম্প্রদায় উভয়কেই ভ্যাকসিন ডোজের আওতায় আনতে চায়, কারো বিরুদ্ধে কোনো বৈষম্য দেখাতে চায় না।
ইতোমধ্যে গত এপ্রিল ও মে মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০ জুন পর্যন্ত শিবিরগুলোতে করোনায় অন্তত ২০ জন মারা গেছেন এবং ১ হাজার ৫৬৬ জন শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, শুধু মে মাসেই প্রায় ৬০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে যা গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট সংখ্যার ৫০ শাতাংশেরও বেশি।
কক্সবাজারে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র লুই ডোনভান ইউএনবিকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভ্যাক্সের টিকা আসার সাথে সাথেই যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেয়া শুরু হয় সেই জন্য ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক মানব সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, কোভ্যাক্সের টিকা আসার এখনো কোনো নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লুই বলেন, কোভ্যাক্স থেকে প্রায় এক কোটি ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে সমানভাবে টিকা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত।
কোভিড-১৯ জাতীয় পরিকল্পনার পাশাপাশি জাতীয় টিকাদান পরিকল্পনা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ বিশেষ বরাদ্দ পেলে তারা রোহিঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় উভয় সম্প্রদায়েরই টিকা দিতে চায়।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের জন্য টিকা সরবরাহ করা হলে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো যারা রোহিঙ্গাদের কারণে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা তা মানবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে, ভ্যাকসিন জনসাধারণের জন্য হওয়া উচিত এবং এতে কোনো বৈষম্য হওয়া উচিত নয়।
ড. মোমেন বলেন, ‘যদি কেউ শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য টিকার কথা বলে তবে তা ন্যায়বিচার হবে না। আমরা বৈষম্য করি না।’
কক্সবাজার জেলা ও ভাসানচর দ্বীপে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র বিশ্বব্যাপী ঘাটতির কারণে ইউএনএইচসিআর কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় ভ্যাকসিনের উদ্বৃত্ত ডোজযুক্ত দেশগুলোর সহায়তা চাইছেন।
কোভ্যাক্স বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী জনসংখ্যাসহ সর্বাধিক গরীব দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এখনো পর্যন্ত টিকা দেয়া শুরু হয়নি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে যে, তারা কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বিস্তৃত সহায়তা পরিষেবা সরবরাহের জন্য সরকার ও মানবিক সম্প্রদায়ের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
আইওএম’র বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান ম্যানুয়েল মার্কেস পেরেইরা বলেন, বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে ওঠার আগে এবং পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আগে আমাদের সহায়তা আরো জোরদার করা জরুরি।’
এর আগে মে মাসে কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরে স্থানীয় প্রশাসন কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলার পাঁচটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কঠোর লকডাউন দিয়েছিল।