প্রতিরক্ষা নীতিমালা :
প্রতিরক্ষা নীতিমালার পুর্বশর্ত হলো শত্রু পক্ষ বা দেশ নির্ধারন করা। এর সাথে যুক্ত হবে শত্রু দেশের অবস্থান, আয়তন, ভৌগলিক দূরত্ব, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা, জাতীয় সম্পদ, জনসংখ্যা, কোন জোটভুক্ত কিনা ইত্যাদি প্রসঙ্গ।
বাংলাদেশের আপাতত যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার মতো কোন দেশ ও পরিস্থিতি নেই। যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারের সাথে এক ধরনের চরম তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে সেটা যুদ্ধের পর্যায় গড়ানোর সম্ভব না নেই বললেই চলে। বিষয়টা আন্তর্জাতিক ইতিবাচক মতামতসহ মূলত চীনের রাজনৈতিক-কুটনৈতিক মধ্যস্থতায় সমাধানের পথে হাটছে। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এ ব্যাপারে বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে বিভিন্ন, সময় ফ্ল্যাগ মিটিং করে।
ভৌগলিক অবস্হানের কারনে বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত এবং আন্তর্জাতিক সীমানা ৪০০০ কিলোমিটারের উপরে এবং দক্ষিণ-পুর্ব কোণে সামান্য পরিমানে মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত যার পরিমান ১৯৩ কিলোমিটার। মুলত আমাদের দক্ষিণেও ভারত এবং সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ মায়ানমারের সামান্য সীমান্ত ছাড়া ভারত বালাদেশকে চারিদিক থেকেই ঘীরে আাছে। কারণ দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর হলো ভারত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চল এবং এর শেষ অংশ সংযুক্ত হযেছে ভারত মহাসাগরের আন্দামান সাগরের সাথে। এ অঞ্চলে অবস্থিত ভারতের আন্দামান ও নিকোবার রাজ্য এবং এখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতের শক্তিশালী ত্রিমাত্রিক নৌ ঘাটি রয়েছে। স্বভাবতকারণেই, বাংলাদেশের কোন বানিজ্যিক, যাত্রী বা সামরিক জাহাজ আন্দামান সাগর অতিক্রম করে সাগর পথে মধ্যপ্রাচ্য বা অনত্র যেতে চাইলে বা ঐ সব অঞ্চল থেকে বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে চাইলে তাকে আন্দামান- নিকোবারের এই নৌ ঘাটির মুখোমুখি হতে হবে।
ভূগোল ও সমুদ্র আইন অনুযায়ী কোন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের যদি নিজস্ব ভূখণ্ডের বাইরে সমুদ্রে কোন ভূখন্ড থাকে তবে এটাকে বলে ” Natural prongation of land and natural right of the state concerned”. সুতরাং, বাংলাদেশ দক্ষিণের সীমান্ত বিহীন অঞ্চলও ভারত থেকে নিরাপদ নয়। ভারত- বাংলাদেশ যুদ্ধ সুদুরপরাহত এবং মায়ানমারের সাথেও সেধরনের যুদ্ধের সম্ভবনা একেবারই সীমিত, যদিও সীমন্ত এলাকায় ছোটখাটো কনফ্লিক্ট হয়ে থাকে স্বাভাবিক ধারাতেই। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে উঠা সশস্ত্র বাহিনী। সে কারনেই দেশ সেবা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের চেতনা ও দেশ প্রেম ভিন্ন ধাচে প্রবাহমান, শুধুমাত্র যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালন নয়, দেশের বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডে রয়েছে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা বেসামরিক প্রশাসনের পাশাপাশি। এটাকে বলা যায় দেশ গড়ায় সশস্ত্র বাহিনীর বেসামরিক প্রশাসনের আওতায় এক ধরনের সরাসরি অংশগ্রহণ।
১৯৮২ সালে এইচ এম এরশাদ সামরিক আইন জারী করে এ ধারনার উপস্থাপন করেন যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনীহা ও সমর্থনের অভাবের কারণে তিনি আর এগুন নি। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে সম্পৃক্ততা থাকলেও তা ছিল খুবই সীমিত। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকেই বিষয়টি গুনগত ও পরিমাণগত মাত্রা ও উচ্চতা পেতে থাকে। বর্তমানে স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সাথে এদের সম্পৃক্ততা ও সংযুক্তি ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলছে। তবে বাংলাদেশের কোন ঘোষিত প্রতিরক্ষা নীতি নেই, যদিও শেখ হাসিনা সরকার ” Forces Goals 2030″ আওতায় তিন বাহিনীকে আধুনিকরনে এক মহা পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। এটি ২০০৯ সালে গৃহীত হয় এবং ২০১৭ সালে পরিবেশ ও পরিস্থিতির নিরীখে পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী অতীতের তুলনায় এখন অনেক আধুনিক, প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ও অগ্রগামী। প্রত্যেকটি বাহিনীর নিজ নিজ স্লোগান রয়েছ যেমনঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্লোগান হলোঃ “সমরে আমরা শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্লোগান হলোঃ “শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়” এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্লোগান হলোঃ “বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত”। সশস্ত্র বাহিনী এখন দেশের বাইরেও বিভিন্ন শান্তি মিশন ও শান্তি জোটে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সংখ্যা ও সার্বিক কর্মকান্ডের বিবেচনায় প্রথম স্থানে রয়েছে। এছাড়া নৌবাহিনী বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহড়ায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। এনডিসিসহ বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক ও যুগোপযোগী সিলেবাস ও সামরিক কসরতের মাধ্যমে অধিকতর মেধাবী ও চৌকশ অফিসার সৃষ্টি করতে পারছে এবং বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারাও এসব প্রশিক্ষনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। (আমি কোন রেফারেন্স ও ফুটনোট যুক্ত করেনি। কারন তা পাঠকের বিরক্তি ঘটাতে পারে। তবে বই আকারে এটা পঞ্চাশটি পর্ব ছাপানোর সময় প্রয়োজন অনুযায়ী যুক্ত করবো)
ডক্টর সিনহা এম এ সাঈদ