ভারতে একদিকে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস অন্যদিকে এখন নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মিউকরমাইকোসিস। মে মাসের শুরুর দিকেই ভারতের চিকিৎসকরা মিউকরমাইকোসিসের ব্যাপারে সতর্ক করা শুরু করেন। অনেকটা বিরল এবং সম্ভাব্য মারাত্মক এই সংক্রমণ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হিসেবেও পরিচিত।

ভারতে এখন পর্যন্ত যারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে দেখা গেছে অধিকাংশই হয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বা কিছুদিন আগেই হয়তো করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে। মূলত সুস্থ হয়ে ওঠার পরও অনেকের ইমিউন সিস্টেম অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমন লোকজনই নতুন এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া এই রোগে আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন ডায়াবেটিসের রোগীরাও।

ভারতে গত কয়েক সপ্তাহে কয়েক হাজার মানুষের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে কয়েকশ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং কমপক্ষে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইতোমধ্যেই ভারতের দুই রাজ্যে নতুন এই রোগের জন্য মহামারি ঘোষণা করে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ

মাটি বা জৈব সারের মতো স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই ছত্রাক তৈরি হয় এবং এটি শ্বাসনালীতে আক্রমণ করতে পারে। তবে এটি করোনাভাইরাসের মতো একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়ায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেন্সন (সিডিসি) জানিয়েছে, নানা ধরনের ছত্রাক এই রোগের জন্ম দেয়। তবে এই ছত্রাক অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই ততটা ক্ষতিকর নয়। তবে ইমিউন সিস্টেম দূর্বল এমন লোকজনের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ বেশ গুরুতর হতে পারে।

এই রোগের জীবানু বাতাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করতে পারে। এছাড়া কাটা-ছেড়া বা পোড়া ত্বকে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। শরীরের কোথায় এই ছত্রাক বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- মুখের ফোলাভাব, জ্বর, ত্বকের আলসার এবং মুখে কালো ক্ষত দেখা দিতে পারে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১৪ মে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমাদের কপাল, নাক, গালের হাড়, চোখ এবং দাঁতের পেছনে এই রোগের সংক্রমণ প্রথমে প্রকাশ পেতে শুরু করে। পরবর্তীতে এটি চোখ, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নতুন এই রোগের কারণে নাকের ওপরের ত্বক কালো বা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, অস্পষ্ট বা কোনো কিছু একের অধিক দেখতে পাওয়া, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং কাশির সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে।

ভারতর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইমিউনিটি সিস্টেম দূর্বল এমন লোকজনকেই এই রোগ বেশি কাবু করতে সক্ষম বিশেষ করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী, ডায়াবেটিস রোগী এবং যারা স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন এমন লোকজন।

এছাড়া অন্যান্য জটিল রোগ যেমন ক্যান্সার অথবা শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন এমন লোকজনের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগী বা মাত্রই এই ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন লোকজনের এই রোগের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি কারণ তাদের ইউমিউনিটি সিস্টেম এই রোগের কারণে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

তবে এটাও বলা হচ্ছে যে, কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানেই সে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হবেই এমনটা নয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় সাধারণ অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘অ্যাম্ফোটিরিসিন-বি’ নামের একটি ওষুধ।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও সম্প্রতি এই রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় রোগীদের ‘অ্যাম্ফোটিরিসিন-বি’ ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এই ওষুধ গ্রহণ করার পর রোগীর সুস্থ হয়ে উঠতে প্রায় ছয় সপ্তাহের মতো সময় লাগে। যত দ্রুত রোগীর দেহে এই ছত্রাকের উপস্থিতি শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা শুরু করা যাবে তত দ্রুত সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

ভারতের মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা এবং গুজরাট এই পাঁচ রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার দুইশোর বেশি মানুষের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। ওই এক রাজ্যেই দুই হাজারের বেশি কেস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮শ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই এক রাজ্যেই কমপক্ষে ৯০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গুজরাটে ৩৬৯ জনের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমাদের এখন নতুন চ্যালেঞ্জ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে এবং প্রস্তুতি নিতে হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading