করোনার প্রভাব নানা ভাবে পড়ছে শরীরের উপরে। সংক্রমণের জেরে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে তাতেই থেমে থাকছে না এই ভাইরাস। স্নায়ু ও মস্তিষ্কেও এই ভাইরাস গুরুতর প্রভাব ফেলছে বলেই উঠে আসছে চিকিৎসকেদের কথায়। শরীর ভাইরাসমুক্ত হওয়ামাত্রই যে সে সব সমস্যা কেটে যাচ্ছে, তেমন নয়। বরং বহু ক্ষেত্রেই ভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘ দিন ধরে থেকে যাচ্ছে সেই সমস্যা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতেই দেখা যাচ্ছে, এমন কিছু উপসর্গ, যা আগের বার তেমন ভাল ভাবে নজরে পড়েনি। তারই মধ্যে চোখে পড়ার মতো হল মস্তিষ্কের উপরে ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। করোনায় আক্রান্ত হলে ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া, স্বাদ না পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা গিয়েছে আগেও। অনেকের ক্ষেত্রেই কর্মশক্তি ফিরে আসতে সময় লেগেছে। তবে এই ক্ষতি যে আরও গভীর, আগে তা যথেষ্ট আলোচিত হয়নি। স্নায়ুর সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসক তৃষিত রায় জানাচ্ছেন, অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে করোনা থেকে সেরে ওঠার মাস ছয়েক পরেও স্নায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পেশিশক্তি কমে যাওয়া। তিনি বলেন, ‘‘কিছু মানুষ করোনা পরবর্তী সময়ে কাজে ফেরার শক্তিই পাচ্ছেন না। হাত-পা প্রায় চলছে না।’’

এই ভাইরাস যে ফুসফুসের পাশাপাশি মস্তিষ্কের ক্ষতিও করছে যথেষ্ট, তা বুঝতে সময় লেগেছে অনেকের। তবে এখন বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা ছেড়ে গেলেও মস্তিষ্কে ধোঁয়াশার মতো কিছু সমস্যা বেশ প্রকট হয়ে উঠছে বলে জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তিনি বলেন, ‘‘ধোঁয়াশার পাশাপাশি, উদ্বেগ, টানা মাথা ঝিমঝিম করার মতো অসুবিধাও অনেকের হচ্ছে। মানসিক ক্লান্তিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে বহু করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের মধ্যে।’’ আর থাকছে যখন-তখন মাথা ব্যথা, ঘুম না হওয়ার মতো সমস্যা।

তবে এমনটা সকলের ক্ষেত্রেই হবে, তা কিন্তু নয়। ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হবেই ভেবে আগে থেকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব। তিনি বলেন, ‘‘এমন বহু মানুষকেই দেখা যাচ্ছে যাঁরা আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছেন ভাইরাস শরীর ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে।’’ অর্থাৎ, ভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি, তবে ভয় পেলে চলবে না। বরং উদ্বিগ্ন হচ্ছেন মনে করলে, হাল্কা ব্যায়াম, গান শোনা, বাগানের যত্ন নেওয়ার মতো কাজে মন দিতে হবে। টিভি বা কম্পিউটারের পর্দায় সর্বক্ষণ চোখ থাকলে মানসিক চাপ বাড়তে পারে। ফলে মাঝেমাঝে সে সব থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে হবে বলেও মত চিকিৎসকেদের।

শরীরের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে মনে করলেই চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। বাড়িতে নিজের মতো করে কোনও পদক্ষেপ করার চেষ্টা একেবারেই নয়। চিকিৎসকেদের পরামর্শ, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে অন্তত ছ’মাস বেশ সাবধানে থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত দুর্বলতা, উদ্বেগ, মাথা ব্যাথা বা ঘুমের সমস্যা টানা অনেক দিন থেকে যাচ্ছে কি না । সুত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading