স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘটনায় ছাত্র, যুব ও শ্রম অধিকারের ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের এ ঘটনাকে ‘হয়রানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) ও সংগঠনটির আহ্বায়ক নুরুল হক নুর।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ছাত্র ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনকে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রী, কিশোর, ও চাকরিজীবীসহ অন্তত ১০ জন রয়েছেন যাদের নাম মামলার এজাহারে নেই বলে জানা গেছে। এ মামলাগুলো তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।

ছাত্র, যুব ও শ্রম অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক এ ব্যাপারে বলেন, ‘সবকটি মামলাই হয়রানিমূলক। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল রাস্তায় নামলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা জানিয়ে দেন, সভা-সমাবেশ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং তারা কর্মসূচি পালন করবেন। সে অনুযায়ী গত ২৫ মার্চ তারা মতিঝিলে মিছিল নিয়ে যান। সেখান থেকেই তাদের ৩৮ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এক দিন পর ভাসানী অনুসারী পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং নতুন একটি মামলা দেওয়া হয়। সফরকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে চারজন গুম হয়েছিলেন। তাদের একজন নাজমুস সাকিবকে ৮৪ ঘণ্টা আটকে রেখে পুলিশ ছেড়ে দেয়। বাকি তিনজনকে দুদিন আটকে রাখার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’

এজাহারে নাম না থাকার পরও যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন- শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া জাবেদ মায়া, যুব অধিকার পরিষদের মমিন আকন্দ, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আসাদুজ্জামান নূর আসাদ, শিপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ক্রীড়া সম্পাদক আরেফিন ফরহাদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ইব্রাহীম খোকন, ইউটিউবার সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও শিপন নামে এক ব্যক্তি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত ২৫ মার্চ পল্টন ও শাহবাগ থানায় দুটি এবং ২৭ মার্চ শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। পল্টন থানার মামলায় হত্যাচেষ্টা, ‘মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র’ নিয়ে দাঙ্গা ঘটানো, বেআইনি সমাবেশ, সরকারি কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয় ৫১ জনের নামে। এর বাইরে শাহবাগ থানায় ‘আসামি’ ছিনতাইয়ের অভিযোগে ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় মতিঝিলের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আবুল কালাম আজাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়।

শাহবাগ থানার অপর মামলায় অভিযোগ ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বাসে আগুন দিতে উদ্যত হওয়া’। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যেসব ব্যক্তিদের নামে মামলা রয়েছে সেই মামলাগুলো তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘হয়রানির যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটা অসত্য। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে তারা যেভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলা যায়। যারা এসব করেছে, তাদের বড় অংশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং জামায়াত–শিবিরের কর্মী। তারা সব নুরের দলে এসে ভিড়েছে। অপরাধে জড়িত থাকার নিশ্চিত তথ্য পেয়েই তাদের ধরা হয়েছে। পুলিশ এখন অ্যাকশনে আছে।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading