হেফাজতের অনেক নেতা ‘উগ্রবাদী মানসিকতা নিয়ে নাশকতায় জড়িত’ বলে দাবি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি পুলিশ বলছে, সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন’ নামক একটি সংগঠন তৈরি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। নিজেদের নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়া সিন্ডিকেট সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করছে। সারাদেশে ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে তাদের উগ্রবাদী চিন্তাধারা, বক্তব্য প্রচার ও বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করছে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, ‘নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশকিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। মোট ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন আছে। এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন।’

মাহবুব আলম বলেন, ‘যেহেতু রমজান মাস, সংযমের মাস। তিনটি টিম গঠন করে দিয়েছি। যাদের কোরআন হাদিসের জ্ঞান আছে, তাদের টিমে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। আমরা সম্প্রতি ও ২০১৩ সালে দায়ের করা মামলা তদন্ত করছি। এর অধিকাংশগুলোই নাশকতার মামলা। নাশকতার ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্য কী, কারা করছে, কেন করছে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি।’

‘মূলত, ২০১৩ সালে সরকার পতনের লক্ষ্যে একটি চক্রান্ত হয়। সেই চক্রান্তের মধ্যে জড়িত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সরকার পতনের। সেখানে হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’

রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের প্লাটফর্ম ‘অরাজনৈতিক’ হেফাজত

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি বছরও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যে নাশকতা হলো সেখানেও একই ধরনের সরকার পতনের কৌশল নেওয়া হয়েছিল। নেতারা হেফাজতকে ‘অরাজনৈতিক’ বললেও সব নেতাই কোনো কোনো দলের নেতা। তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা এজেন্ডা আছে। হেফাজতকে অরাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে তাদের সেই দলীয় এজেন্ডাগুলো আদায় বা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। হেফাজতে ইসলাম এমন একটি সংগঠন যারা সব মাদরাসা ছাত্রকে ডাকতে পারে এবং তাদের ডাকে সাড়া দেয়। এই সুযোগ নিয়েই হেফাজতকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে ১৬৪ ধারায় বাবুনগরী জবানবন্দী দিয়েছিলেন। সম্প্রতি মুফতি ফখরুলের জবানবন্দিতে সেই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, হেফাজতের রাজনৈতিক চরিত্র আর নেই। হেফাজত এখন অনেকের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপচেষ্টা ও নাশকতা করছে।’

হেফাজত নেতারা আসলে কী চান- জবাবে মাহবুব আলম বলেন, ‘তাদের আসলে সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান মডেলে বানানোর পরিকল্পনা আছে। হেফাজতের অনেক নেতা আছে যারা উগ্রবাদকে সমর্থন করে না। তবে আমরা তদন্তে উগ্রবাদী নেতাদের নাম জানার চেষ্টা করছি। উগ্রবাদের মাধ্যমে যারা নাশকতার চেষ্টা করছে সেই ধরনের ভিডিও ফুটেজ, অডিও ও জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যগুলো সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’

যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘মাদরাসার এতিম অসহায় ছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বাড়ি-গাড়ি করেছেন হেফাজত নেতারা। মাদরাসা দখলের মতো অপকর্ম ও অনেকের নারী বিলাসের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।’

‘স্ত্রী থাকবে, মর্যাদা থাকবে না’ চুক্তিতে মামুনুলের বিয়ে

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গোপন বিয়ের বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রথম বিয়ে শরিয়তসম্মতভাবে হয়েছে। পরবর্তী দুটি বিয়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন যা ছিল চুক্তিভিত্তিক। কাবিননামা ছাড়া পরের দুই বিয়েতে স্ত্রী থাকবে তবে মর্যাদা পাবে না। আবার স্ত্রীর মতো মেলামেশা করতে পারবে, এমন চুক্তি হয়। যদিও চুক্তিতে সম্পর্কের অধিকার ও সন্তান ধারণ করতে না পারার কথাও বলা হয়েছে যা প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading