‘পুরুষ’ মানেই-একগাদা দায়িত্ব কর্তব্যের বোঝা মাথায় নিয়ে সারাজীবন বয়ে বেড়ানো। এটা হয়ত আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত নিয়ম-নীতিমালা। তবে, সব পুরুষেরা তা পারে না, স্বার্থ নামক অথই সাগরে ডুবে যায়!
একটা কথা স্পষ্টভাবে সবাইকে বলতে চাই পুরুষ হিসেবে এটা মনে রাখবেন, এমন জীবন আশা করবেন না যেখানে কেবলইআপনার প্রশংসা করা হবে। সবকিছু সহ্য করতে শিখুন। দুর্নামের ভয়ে পরিবার-পরিজন, আত্মীয় স্বজন, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্বপালনে পিছপা হবেন না।
জন্মেই যদি পুরুষ হোন তাহলে ধরে নিবেন আপনি “কলুরবলদ” হয়ে জন্মেছেন। ‘কলুরবলদ'(একটানা খাটুনি) মানে যে পরেরজন্যই খাটে কিন্তু নিজের বেলায় যার প্রাপ্তিটা শূন্য। তারপরেও পুরুষ হয়ে জন্মানোর জন্য আপনাকে অভিনন্দন। আমাদেরভুবনে আপনাকে স্বাগতম।
বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তরুণ পাড়ি দেয় দূর প্রবাসে।মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক টানপোড়ার জন্য কাপুরুষের মতো নিজেরভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পাড়ি জমায় সেই সুদূর প্রবাসে।
দেশ থেকে প্রবাসে গিয়ে কি খুব ভালো থাকে কেউ? না, দেশ থেকে সবকিছু ছেড়ে যেমন তার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যখন প্রবাসে একা একটা মানুষ যায় বা কাজ করে তখন তার মনটা কিন্তু পড়ে থাকে দেশের মাটিতেই।মনে পড়ে তার মা-বাবার কথা, ভাই-বোনের কথা, স্ত্রী-সন্তানের কথা। তখন তার আর কাজ করতে ইচ্ছে হয় না।
যখন ইচ্ছে হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পুনরায় দেশে চলে আসতে। কিন্তু সময় এবং পরিস্থিতি তা করতে দেয় না, কেননা সে যদিবিদেশ থেকে দেশে এসে পড়ে তবে তার আপন মানুষগুলো অর্থকষ্টে ভুগবে, তিনবেলার খাবার একবেলা খেতে হবে, কোন বেলাআবার না খেয়েই থাকতে হবে। এটা তার চোখের সামনে ঘটলে সে সহ্য করতে পারবে না।
প্রবাসি মনে করে, শত যন্ত্রণার পরও দেশের যাতে তার প্রিয় মানুষগুলো একটু ভালো থাকে, একটু স্বস্তিতে থাকে, একটু সুন্দরথাকে, সে যেন পরবর্তীতে দেশে ফিরে সে মানুষগুলোর হাসিমুখ দেখতে পারে। আহা, তার কাছে তখনই পরম শান্তি বলে মনে হয়।মনে হয় এই মুহূর্তটার জন্যই তো দেশের বাইরে থাকা, খানিক কষ্ট করা।
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রবাস জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে উপার্জন করা টাকা সে দেশেবাবা, মা, ভাইবোনের জন্য পাঠাতে থাকে। প্রবাসীর এই উপার্জনের টাকাই তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল। পরিবারের ক্ষতিরকথা চিন্তা করে অনেকবার অনেক প্রবাসি দেশে আসতে চেয়েও আসতে পারেনা। কারণ সে দেশে এলে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়েযাবে। তাই সে দেশে না এসে ৫৫-৬৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপামাত্রায়ও দিনের পর দিন কাজ করে গেছে।
প্রবাসে কামলা দিতে দিয়ে যাওয়া মানুষগুলি, গায়ের রক্ত পানি করে দেশে টাকা পাঠায়। প্রবাসে নিজেরা ভোগ বিলাসের ধারধারেনা, ভালোমন্দ খেতেও পারেনা, কারন মাস শেষে তাকে দেশে, তার পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে হবে। আর সেই টাকায়বোনের বিয়ে, যৌতুক, ভাইয়ের পড়াশুনা, ভোগ বিলাসিতা, প্রবাসি কামলা দেওয়া ভাইয়ের টাকায় দামি মোবাইল কিনে ফুটানি, ভাইয়ের রক্ত পানি করা পয়সায় ইস্ত্রি করা কাপড় পরে ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এসব করে। পরিবারের কাছে প্রবাসি যেন সোনারডিম পাড়া একটা হাঁস।
প্রবাসি কামলা যখন এক সময় আর কামলা দিতে পারেনা, প্রবাসে পরিশ্রম করতে করতে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে তখন তার রক্তপানি করা পয়সায় কেনা সম্পত্তি চলে যায় ফুটানি করা ভাই বোনের হাতে৷ প্রবাসি সেই ছেলেগুলি কলুর বলদই হয়ে রয়। আহারেকেন যে ছেলেগুলি নিজের জন্য অল্পও ভাবেনা।
হাড়ভাংগা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায় প্রবাসী কামলারা৷ সেই টাকায় দেশে জমি কেনে, বিল্ডিং করে। কিন্তু যখন এক সময়প্রবাসী কামলা আর কাজ করতে পারেনা, দেশে চলে যায়, তখন গিয়ে দেখে তার জন্য না আছে জমি, না আছে ঘর, না আছেতার পরিশ্রমের একটা টাকা। সবই মা, বাপ, ভাই, বোন ভোগ বিলাস করে শেষ করে, আর তাদের নামে জমিজমা কেনে।
যেমন শুন্য হাতে প্রবাসে এসেছিলো, আবার তেমনই শুন্য তার হাত। মাঝখানে প্রবাসে কামলা দিয়ে জীবনের সেরা সময়গুলোওহারিয়ে যায়।
ওহে প্রবাসী ভাইয়েরা, মা, বাপ, ভাই বোনকে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবেন। নাহলে দেশে ফিরে গিয়েআপনিও একটা কলুর বলদই হয়ে যাবেন৷ আমি আমার গ্রামের আশেপাশের অনেক প্রবাসী ছেলেকে দেশে ফিরে একেবারে নিঃস্বজীবন যাপন করতে দেখেছি। কারন তারা নিজের জন্য কোন টাকা না রেখে সব পাঠিয়ে দিতো বাপ ভাইয়ের নামে।
প্রবাসীরা কি টাকার মেশিন? একজন প্রবাসী দেশে ফিরে আসার পর সবাই তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি আবার কবে যাবা? কেউজিজ্ঞাসা করেনা তার কষ্টের কথা। ভাই-বোনের স্বপ্ন পূরণে যে মানুষটি প্রিয় ভূমি ছেড়ে ভালো রোজগারের আশায় একদিন উড়ালদেন ভিন্ন দেশে, প্রবাস জীবন শেষে ফিরে আসার পর পরিবারে সেই মানুষটির কতোটা মূল্যায়ণ? সে কি ঠিকঠাক মূল্যায়ণ পায়, নাকি পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে সে একজন কলুর বলদ?
পরিশেষে বলি, হে আল্লাহ! করোনাভাইরাস এর মহামারী থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন সকলের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলককরে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। কিন্তু কেউ কিছু মানছেন না। অর্থাৎ কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই! অথচসরকারের সব পক্ষ থেকেই বার বার বলা হয়েছে, মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবেদেশজুড়ে।
লেখক: আবু জাফর শিহাব (এল এল বি)