মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করে নামের শেষে ‘মাদানী’ উপাধি ব্যবহার করে আসছিলেন আলোচিত বক্তা রফিকুল ইসলাম। এদিকে এই উপাধি ব্যবহার করায় নিজের নামের সঙ্গে এই বক্তার নাম মিলে যাওয়ায় অনেকটাই বিব্রত ও বিরক্ত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মদিনা শাখার আমীর ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী।

এই দুই কারণে ‘শিশুবক্তা’ খ্যাত রফিকুল ইসলামকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শরীফুল হাসান খাঁন লিগাল নোটিশ পাঠান। এমন নোটিশ পেয়ে মনক্ষুণ্ন ও হতাশ হয়েছেন রফিকুল ইসলাম।

তিনি কেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করেও ‘মাদানী’ উপাধি ব্যবহার করেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

সম্প্রতি এক মাহফিলে হাজির হয়ে এ তিনি জানান, নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া ‘শিশুবক্তা’ উপাধিটি মুছে ফেলতে এই পথ অবলম্বন করেছিলেন। তিনি এখন থেকে আর ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিতি পেতে চান না। তবে মদিনায় পড়ালেখা না করলেও তিনি বিশেষ একটি কারণে মাদানী উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন বলে দাবি করেন রফিকুল ইসলাম।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আলেমরা তাদের নামের শেষে এমন শব্দ জুড়ে দেন যা দিয়ে তাদের নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। এটি একটি রসম। কেউ নামের শেষে তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন তা জুড়ে দেন। যেমন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এলে মাদানী, মিসরের আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করলে আজহারী, দেওবন্দ থেকে এলে কাসেমি বা দেওবন্দী উপাধি ব্যবহার করেন আলেমরা। কেউ কেউ আবার তার জন্মস্থানের নাম ব্যবহার করেন। দেশে অনেকে নিজ মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করেন। যেমন মোহাম্মদপুরের রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষালাভকারীরা রহমানী, জামিয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা মাহমুদী ব্যবহার করে।

এরপর রফিকুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, আমি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শিক্ষার্থী হিসেবে কি তাহলে মাদানী লিখতে পারি না?

রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এই মাদানী উপাধি ব্যবহারে আমার বারিধারা মাদ্রাসার শিক্ষকরা কখনো বিরোধিতা করেননি। তাদের পরামর্শ নিয়েই আমি এই উপাধি ব্যবহার করেছি। আমি ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে আর পরিচিতি পেতে চাই না। যখন শিশু থাকব না তখনো কি এই উপাধি নিয়েই থাকতে হবে আমাকে? যারা আমাকে ‘শিশুবক্তা’ বলেন একসময় তাদের মাহফিলে যাওয়া বন্ধ করে দিই। এরপরও যখন নাম থেকে ‘শিশুবক্তা’ উপাধি মুছে ফেলতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম তখন শিক্ষকদের পরামর্শে মাদানী উপাধি গ্রহণ করি।

ক্ষোভের সুরে এই বক্তা বলেন, নামের মিলের কারণে সমস্যায় পড়ায় হেফাজতের ওই নেতা বিষয়টি হেফাজতের মহাসচিবকে বলতে পারতেন। মামুনুল হকের মতো নেতাদের বলতে পারতেন। আমার শিক্ষকদের কাছে নালিশ করতে পারতেন। বা আমাকে সরাসরি বা মেসেজে জানাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আমার বাড়িতে সরাসরি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। এতে আমার সহজসরল মা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এলাকার লোকজন আমাকে ‘জাল মাদানী’ বলে কটাক্ষ করছে। দেশের জাতীয় দৈনিকে আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এতে আমার সম্মানহানি ঘটছে। অথচ এই মাদানী উপাধি ব্যবহারে আমি ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় বা উপমহাদেশের কোনো নিয়ম ভঙ্গ করিনি। আমি ভাইরাল হতেও এই উপাধি ব্যবহার করিনি।

প্রসঙ্গত, তরুণ ওয়ায়েজ মাওলানা রফিকুল ইসলাম রাজধানীর জামিয়া মাদানীয়া বারিধারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। শারীরিক আকৃতিতে ছোট হওয়ায় শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত তিনি। মাওলানা রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা জেলার পশ্চিম বিলাশপুর সাওতুল হেরা মাদ্রাসার পরিচালক বলে জানা গেছে। এছাড়া ২০ দলীয় জোটভূক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও রাবেতাতুল ওয়ায়েজিনের সঙ্গে যুক্ত তিনি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading