মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে ফের গুলি চালিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার মান্দালয়ে এ গুলির ঘটনায় অন্তত একজন নিহত হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর আগে জাতিসংঘ বুধবার বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ও সৈন্যদের গুলি এবং সংঘাতে ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল।

দেশটিতে ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভে এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ দমনপীড়ন উপেক্ষা করেই আন্দোলন অব্যাহত আছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে; চলমান সংকট নিয়ে আলোচনায় পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাতিসংঘের মিয়ানমার মিশনে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সামরিক জান্তার ব্যর্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার পরপরই শুক্রবার মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর এ গুলির ঘটনা ঘটল। অভ্যুত্থানবিরোধীরা এদিনও মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া এবং অং সান সু চিসহ রাজনীতিকদের মুক্তির দাবিতে নানান কর্মসূচি করেছে।

দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গুলি ছুড়ে। গুলি এক ব্যক্তির গলায় আঘাত হানে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

টেলিফোনে এক চিকিৎসক বলেছেন, “আমার ধারণা তার বয়স ২৫ এর কাছাকাছি, যদিও আমরা এখন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

শুক্রবার ইয়াংগুনে বিক্ষোভকারীদের সরাতেও পুলিশকে রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ছুড়তে হয়েছে। এদিন বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সাদা কোট পরে কর্মসূচিতে নামা চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
ইয়াংগুনের পশ্চিমের শহর পাথেইনেও অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন।

আগের দিন বৃহস্পতিবার পুলিশ মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি ছুড়েছিল, যদিও এদিন তাদেরকে বুধবারের তুলনায় অনেক সংযত দেখা গেছে।

মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণভাবে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়াদের ওপর ‘নির্মম নিপীড়ন’ বন্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বাশেলেট। অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে এরই মধ্যে এক হাজার ৭০০র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি; গ্রেপ্তারদের মধ্যে সাংবাদিকই ২৯ জন।

রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের কাছাকাছি দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুরই ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন বলেছেন, নিজের দেশের লোকজনের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ‘জাতীয় লজ্জার’।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যদিও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির এখনকার পরিস্থিতির ওপর বাইরের চাপের প্রভাব খুবই সীমিত বলে তিনি স্বীকারও করে নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে চাইলেও তা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এছাড়া শুক্রবার দেশটির অনেক এলাকার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে বলে পরে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading