দেশের জাতীয় চিড়িয়াখানায় অজগরের খাচায় জীবন্ত খরগোশ খাদ্য হিসেবে দেয়া নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। জীবন্ত খরগোশকে অন্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবে খাঁচায় ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘বাংলাদেশ র্যাবিট গ্রুপ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রাণী অধিকার রক্ষায় সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে খরগোশপ্রেমীদের সংগঠন বাংলাদেশ র্যাবিট গ্রুপ ও বিভিন্ন প্রাণী রেসকিউ গ্রুপ রবিনহুড।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রেট অশোকা ফেলো মোহাম্মদ আবু সাইদ বলেন, ‘বাংলাদেশে চিড়িয়াখানা প্রথা অনেক পুরাতন। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে চিড়িয়াখানা প্রথা উঠে গেছে। এখন চলছে সাফারি পার্ক বা মুক্ত চিড়িয়াখানা। এছাড়া যে সকল দেশে চিড়িয়াখানা আছে সেসব দেশেও অনেক উন্নত পদ্ধতিতে এগুলো পরিচালনা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ঢাকার চিড়িয়াখানায় যত প্রাণী আছে এগুলো সবই বন্যপ্রাণী। এখানে তেমন গৃহপালিত প্রাণী নেই। অথচ চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ কেউ চাকরি করে না। যারা আছে তারা কিন্তু গৃহপালিত প্রাণীর বিদ্যায়ও শিক্ষিত না। তারা প্রাণিবিদ্যা ও গৃহপালিত প্রাণীর বিষয়ে পড়াশোনা করা। সুতরাং আমরা প্রাথমিকভাবে বলতেই পারছি, তারা আসলে কতটা বন্যপ্রাণীর বিষয়ে জানেন বা পরিচালনা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, খাঁচার থাকা একটি সাপকে জীবন্ত খাবার দেয়া হয়। এর কি অন্য বিকল্প উপায় নেই? এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আসলে পৃথিবী কতটা আধুনিক সেটা তারা জানছে না। শীতকালে এমনিতেই সাপ কম খায়। অথচ আমরা শীতের সময়ে চিড়িয়াখানায় গেলে দেখতে পাই সব সময়ই খাঁচার মধ্যে একটি জীবন্ত প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যদি সাপকে খরগোশ খেতেই দিতে হয় তবে সেটিকে খাঁচার বাহিরে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারপর দিতে হবে। অথবা ফ্রিজিং করা খাবার নরমাল তাপমাত্রায় এনে গরম পানিতে হাল্কা সিদ্ধ করে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের চিড়িয়াখানায় এমন লোকবলই নেই।’
প্রাণী রক্ষায় দেশে-বিদেশে রবিনহুড খ্যাত ও বিপদগ্রস্ত প্রাণী রক্ষায় এগিয়ে আসা সেচ্ছাসেবীদের সংগঠন রবিনহুডের প্রতিষ্ঠাতা আফজাল খান বলেন, ‘বছরের পর বছর আমরা একটি বণ্যপ্রাণীকে আটকে রাখি। আবার নিজেদের বলি সৃষ্টির সেরা জীব। বর্তমান বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা যদি প্রত্যেকের জায়গা থেকে একটু এগিয়ে আসি তাহলে পৃথিবী পাল্টে যাবে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারি কিন্তু নিজে করছি কতজন? এখন একটা প্রাণীকে আমরা সহজেই মেরে ফেলতে পারছি। আমার দেশ থেকে কাক বিলীন হয়ে গেছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে কুকুর-বিড়ালকেও আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।’
প্রাণী রক্ষায় দেশের সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে এই প্রাণীপ্রেমী বলেন, ‘চিড়িয়াখানা একটি বিনোদনের জায়গা। এখানে শিশুরা যায়। তারা দেখতে চায়, বুঝতে চায়। কিন্তু কী দেখছে তারা চিড়িয়াখানায় গিয়ে? তারা দেখছে, একটি প্রাণীর খাঁচায় খাবার হিসেবে আরেকটি প্রাণীকে জীবন্ত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যে প্রাণীটি বাঁচার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। প্রতিটি প্রাণীর বাঁচার অধিকার আছে। কোনও প্রাণী ছাড়া এ পৃথিবী বাঁচবে না। তাই আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাণীর প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে। সংবাদমাধ্যমগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাণী রক্ষায় আমাদের সকলে এগিয়ে আসতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, বাংলাদেশ র্যাবিট গ্রুপের এডমিন নাদিয়া বিনতে আলমসহ রবিনহুড ও বাংলাদেশ র্যাবিট গ্রুপের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
More Stories
২৫ ও ২৬ মার্চ জিয়া হত্যাকাণ্ড চালান: প্রধানমন্ত্রী
কেন আমাদের এখনও আন্তর্জাতিক নারী দিবস দরকার!
প্রজন্ম হোক সমতার সকল নারীর অধিকার