আমার একমাত্র বোন শিরিন (নিরু শামসুন্নাহার মতিন) আর নেই।
করোনার করাল গ্রাস ওকে লন্ডনের হাসপাতাল থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। বোনটি আমার ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ দিন ধরে কোভিড এর সাথে লড়াই করে করে ক্লান্ত হয়ে ২১ জানুয়ারি স্থায়ী জগতে চলে গেলো। কবরস্থ করা হলো ২৫ জানুয়ারি লন্ডন সময় আড়াইটায়।
হসপিটালে অক্সিজেন মাস্ক পরে থাকা অবস্থায় ওর সাথে আমার কথা হয়েছে ‘ফেস টাইমে’।আমরা সবাই অপেক্ষায় ছিলাম ওর ঘরে ফেরার। কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরেই যখন ICU তে নিয়ে গেলো তখনো কেউ ভাবতে পারিনি এটা তার অন্তিম যাত্রা।
গত ২৩ ডিসেম্বর আমার ছোটভাই খোকনসহ দেশে গিয়েছিলাম এক মাসের জন্য। যাবার আগে ওকে বলেছিলাম – তুইও চল। করোনার মধ্যে বাইরেতো আর বেরুবোনা। ঘরে সব ভাইবোনেরা মিলে আড্ডা দেবো। ও বললো, না আমি ভ্যাক্সিন না নিয়ে যাবোনা।’
কিন্তু সেই ভ্যাক্সিন না নিয়েই কি করে চলে গেলি আরেক জগতে? তুইই বল, এটা কি ঠিক করলি?
তিন বছর আগে ২০১৭, ২২ অক্টোবরে সুদুর লন্ডন থেকে অটোয়ায় এসেছিলি তোর দুলাভাই’র (আ ফ ম মাহবুবুল হক) শেষ সময়ে আমাকে সান্তনা দেবার জন্য, মানষিক শক্তি বাড়াবার জন্য। সাথে এসেছিলো খুররম ভাই (শিরিনের স্বামি) এবং মুনমুন (ভাই মানিকের স্ত্রী)। প্রতিদিনই আমরা অনেকখানি সময় কাটাতাম হাসপাতালে অচেতন মাহবুবের বেডের পাশে। কিন্তু সেই তুইই চলে গেলি ! আমারতো আর কোন বোন নেইরে যে এখন সান্তনা দেবে?
কয়কদিন পরেই (১১ নভেম্বর) আবার
সাতসমুদ্দর পাড়ি দিয়ে আসলি মাহবুবকে কবরস্থ করার সময় শেষ বিদায় জানাবার জন্য।
আর দুর্ভাগা আমি তোকে শেষ বিদায় জানালাম ‘জুমের’মাধ্যমে। ফ্লাইট রেস্ট্রিকসনের কারনে যেয়ে তোকে একটু ছুঁয়ে আদর করে দিতে পারলামনা।
ওপারে নিশ্চয়ই আম্মা, আব্বা এবং মাহবুবের সাথে তোর ভালো সময় কাটবে। বেশিদিন নয়, আমিও যুক্ত হবো শিঘ্রই তোমাদের সাথে। সেই অব্দি তোমাদের সবার জন্য রইলো অফুরন্ত ভালোবাসা আর দোয়া।
কাম্রুন্নাহার বেবী , অটোয়া, কানাডা ।