প্রখ্যাত সাংবাদিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট সন্তোষ গুপ্ত। তিনি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় সাংবাদিকতার জীবনে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।তার লেখা ‘অনিরুদ্ধের কলাম’পাঠকমহলে সমাদৃত হয় । কবিতা, শিল্পকলা, চিত্রকলা, রাজনীতি, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ১৪টি বই লিখেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সন্তোষ গুপ্ত ১৯২৫ সালের এই দিনে( ৯ জানুয়ারি) ঝালকাঠি জেলার রুনসী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই তার বই পড়ার প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল । কিশোর বয়সে তিনি একবার রবীন্দ্রনাথের ৪৪টা কবিতা একনাগাড়ে মুখস্থ বলে তিনি তার শিক্ষক কে তাক লাগিয়ে দেন । শিক্ষক মুগ্ধ হয়ে তাকে উপহার দেন ‘সঞ্চয়িতা’ ও ‘চয়নিকা’।কিশোর বয়সেই সন্তোষ গুপ্ত রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি তিনি ম্যাক্সিম গোর্কি, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, স্বামী বিবেকানন্দ ও কাজী নজরুল ইসলামের বই পড়ে ফেলেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে আইজি প্রিজন অফিসে চাকরিতে যোগাদানের মধ্যদিয়ে সন্তোষ গুপ্ত তার কর্মজীবন শুরু করেন । ১৯৪৫ সালে তিনি পূর্ববঙ্গে ফিরে আসেন।তখন ঢাকায় কারা বিভাগের আইজির অফিসে সন্তোষ গুপ্তের পোস্টিং হয়। সরকারি চাকরিতে থাকাকালে তিনি গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই দমননীতি নেমে আসে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর এবং অনেকের সঙ্গে সন্তোষ গুপ্ত ও তার মা গ্রেপ্তার হন। কিন্তু জেলখানায় তাকে দেখে আইজি প্রিজন ভীষণ অবাক হয়ে বলেন, তোমাকে ভুল করে ধরে এনেছে। আমি তোমার রিলিজের ব্যবস্থা করছি। সন্তোষ গুপ্ত বলেন, ভুল হয়নি; পুলিশ ঠিক লোককেই ধরেছে।জেল থেকে বের হওয়ার পর ১৯৫৭ সালে সংবাদে যোগদান করেন।কাজ করেছেন আজাদ পত্রিকায়।১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক শাসনের শুরুতেই তিনি আবার গ্রেফতার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি কলকাতায় ন্যাপের মুখপত্র ‘নতুন বাংলা’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি মৌলিক কবিতা ছাড়াও শেলির কবিতা আর শেক্সপিয়রের সনেট অনুবাদ করেছেন, যেগুলোর বেশিভাগ ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার সময় হারিয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং পরে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যার পর তিনি অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি তার বিশ্বাস, নীতি ও আদর্শ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। তার লেখা ‘ইতিহাস আমাদের দিকে’, ‘সমাজতন্ত্রের অন্য ইতিহাস’, ‘স্মৃতি-বিস্মৃতির অতলে’ প্রভৃতি গ্রন্থ ও নিবন্ধ। চিত্রকলার সমালোচনাসহ বহুমাত্রিক সাহিত্যচর্চাও করেছেন তিনি।সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য সন্তোষ গুপ্ত একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বহু পদক অর্জন করেন।
কাজী সালমা সুলতানা , লেখক এবং গণমাধ্যম কর্মী ।