বিজয়ের মাস শেষ হতে আর মাত্র দিন তিনেক বাকী।দীর্ঘ পন্চাশ বছর পেরিয়ে গেলো।ক্রমে ক্রমে আমাদের সেদিনের যুদ্ধফেরৎ তরুণ তুর্কী বীর জনযোদ্ধাগন হারিয়ে যাচ্ছেন।যাঁরা আছেন-তাঁরাও বয়সের ভারে বার্ধক্য জনিত কারনে নানারকম রোগব্যাধি নিয়ে কোন রকম বেঁচে থাকার মতো।অনেককেই আফসোস করতে দেখা যায়-যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে কোনরকম চাওয়া পাওয়ার আশা না করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন,তাঁদের সে স্বপ্ন এখনো অনেকদূর!!! আমরা কখনো কি স্মরণ করি বাংলাদেশে অনেকেই প্রেসিডেন্ট,প্রধানমন্ত্রী,মন্ত্রী,সাংসদ,সচিব,বিখ্যাত কবি,সাহিত্যিক এমনকি নোবেল লরিয়েট হয়ে জন্ম নেবেন-তবে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আর কেউ জন্মগ্রহন করবেন কি? আমরা কেউ কি মনে রেখেছি- ১৯৭১ সালের ১৬’ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করার পর থেকে ১০’ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত যুদ্ধফেরৎ তরুণ তুর্কীদের সহযোগীতায় সদ্য স্বাধীন দেশ কিভাবে পরিচালিত হয়েছিলো? কোথাও রাহাজানি,লুঠপাঠ,স্মাগলিং,দূর্ণীতি, মারামারি,অন্যায়,অবিচার আর অত্যাচারের কোন সংবাদ আদৌ ছিলো কি? স্বজন হারানোর বেদনা যন্ত্রনা উপেক্ষা করে মুক্তি অর্জনের সেদিনের সেই অনাবিল হাঁসি এখন ক’জনাইবা হাঁসতে পারে??? বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি বন্দনা,পারিবারিক বন্দনা,দলীয় বন্দনা,মোসাহেবী,তাবেদারী,তৈলমর্দন কেউ দেখেছেন কি??? আমাদের ক’জনাইবা এখনো স্মরণ করি-প্রবাসী মুজিবনগর সরকার পরবর্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ,সিরাজুল আলম খান ও শেখ ফজলুল হক মনি’র অনুরূধে বঙ্গবন্ধু না আসা পর্যন্ত সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার খলিফা খ্যাত আ স ম আবদুর রব,আবদুল কুদ্দুস মাখন,নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজদের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন যৌথ বিবৃতি প্রদানের কথা??? তখনকার ছাত্রনেতাদের প্রতিটি বাক্য সাধারণ জনগন দেবতুল্য বাক্য হিসাবে মেনে নেয়ার বিষয়টি আমরাতো অনেকটা ভুলেই গেছি!!! ১৯৭২’সালের ১০’ই জানুয়ারী’র পরবর্তি সময়ের কথা বাদ দিলে ১৯৭১’সালের ১৬’ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২’সালের ১০’ই জানুয়ারী পর্যন্ত ডাকসূ এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার খলিফা খ্যাতগন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হতো কি?
সেই সময়ের যুদ্ধফেরৎ তরুণ তুর্কি জীবিত জনযোদ্ধাদের জিজ্ঞ্যেস করলেই প্রশ্নের উত্তর খূঁজে পাওয়া অসম্ভব কি? আগামী জমানার সন্তানেরা নতুন করে ‘বিজয় অর্জনের দিন থেকে শুরু করে দশই জানুয়ারী’ সদ্য স্বাধীন দেশের মুকুটহীন সম্রাট বাঙালী জাতির অন্যতম শ্রেষ্ট সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে বীরের বেশে পদার্পনের দিন পর্যন্ত ঐ ২৪/২৫ দিনগুলোর কাহিনী সমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণের মতো খুঁজে বের করে সত্যিকারের ইতিহাস রচনা অসম্ভব বলে মনে হয় কি? আমাদের দেশ লক্ষ বীরের দেশ।বিজয়ের মাসে আমরা বুকে হাত দিয়ে ক’জনাইবা বলতে পারি যে, রাজধানী থেকে শুরু করে সকল শহরের কথা বাদই দিলাম।এমনকি গ্রামেগন্জে ক’জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়,ব্রিজ,রাস্তাঘাট,স্থাপনা বা বিল্ডিংয়ের নামকরণ করা হয়েছে??? স্কুল কলেজের বর্তমান প্রজন্মের সন্তানরা ক’জন বীরের নাম জানেন? ছোটদের জন্য ক’জন বীরের নামে বড় ছাপার অক্ষরে জীবনী লেখা হয়েছে? কয়েকশ বা কয়েক হাজারের কথা বাদই দিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল বিদ্যাপীঠ,ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মা,লক্ষ মা-বোনের আহুতি ও সম্ভ্রমহানির কথা আমরা কি ভূলতে পারি? বাংলাদেশ কি কারো দয়ার দান? ছাত্র,শ্রমিক,কৃষক,মেহনতি মানুষরাই সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়-বাংলাদেশ আসমান জমিন থেকে নাজিল হয়েছিলো কিনা-কিংবা মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরের পেছনে ১৯৭১’সালের ৭’ই মার্চ বা ২৬’শে মার্চ থেকে ১৯৭১’সালের ১৬’ই ডিসেম্বরের আগে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশে আরও অনেক কাহিনী ছিলো কিনা কিংবা আদৌ কোন ধরনের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে কিনা-জানতে অসুবিধা হওয়ার কথা কি? জাতির সত্যিকার ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলা না গেলে দুর্ণীতি ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ নাগরিক আশা করা বাতুলতা নয় কি?

সিকদার গিয়াস উদ্দিন , লাসভেগাস থেকে ।
More Stories
বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগপত্র আদালতে
প্রয়োজনে প্রতি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করা হবে: তাপস
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছেন: কৃষিমন্ত্রী