২০১৯ সালের মে মাসে কানাডা প্রবাসী ব্যবসায়ী হিশাম চিশতীকে বিয়ে করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা তমা মির্জা। করোনাকালে অসুস্থ মাকে দেখতে কানাডা থেকে দেশে আসেন হিশাম। সম্প্রতি তমা ও তার স্বামী বাড্ডা থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করেছেন। যৌতুক, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তমা। আর মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে এই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্বামী হিশাম চিশতী। এবার এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন তমা মির্জা।

গতকাল রাতে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন তমা মির্জা। ৩৯ মিনিটের এই লাইভের শেষ দিকে তমা জানান, তিনি এখন চরম এক পর্যায়ে পৌঁছেন। আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়ে তমা বলেন, ‘যদি তার কিছু হয়, তবে এর জন্য দায়ী থাকবেন হিশাম চিশতী।’

লাইভের শুরুতে তমা বলেন, ‘হিশামের সঙ্গে আমার পরিচয় আমার এক কমন বন্ধুর মাধ্যমে। প্রথমেই তাকে আমি অত্যন্ত ভদ্র ছেলে হিসেবে পেয়েছি। তার কনভেন্সিং পাওয়ার খুবই বেশি, যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে আমি তাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই।’

এই তারকা আরও বলেন, ‘আমার জানা মতে, কানাডার টরোন্টো শহরে প্রায় ৫০ হাজার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী। যারা বছরে দুই/ তিনটি বাড়ি বিক্রি করতে পারেন। হিশামও তাদের মধ্যে একজন। তাই তাকে বিগশট যারা ভাবছেন, সে তা নয়। তিনি কানাডাতে সাংস্কৃতিক শো স্পন্সর করেন। ২০০-৫০০ ডলার দিয়েই স্পন্সর হয়। আমি আসলে তার স্পন্সরের চেয়ে তিন-চারগুণ সম্মানী পাই।’

স্বামীর প্রসঙ্গে তমা আরও বলেন, ‘স্ত্রী বা স্বামী হিসেবে কে কাকে কী গিফট করছেন, তা বলাটাও খুব ছোটলোকি বিষয়। সে বলেছে আমাকে নাকি ২০ লাখ টাকা ধার দিয়েছে। এত টাকা দিলে তো প্রমাণ থাকে, হয়তো অ্যাকাউন্টে দেবে। বা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এগুলো প্রমাণ দিক। একটা প্রমাণ দিলেই হবে। সে আমাকে নাকি নিয়ে ঘুরতে গেছে! মূলত আমার সঙ্গে সে যেত। সম্প্রতি আমি ফ্যাশন ইউকে শো স্টপার হিসেবে গিয়েছি। আমার স্বামী ফ্রি লোডে গেছে, যারা অর্গানাইজার তাদের কাছে খোঁজ নিলেও হবে।’

ডিভোর্সের কাগজ উপস্থাপন করে তমা বলেন, ‘সে ডিভোর্স চেয়েছে, আমি নাকি তা দিইনি। অথচ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আমি ডিভোর্স ফাইল করি। এটা বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে। সে কিন্তু ডিভোর্স ফাইল করেননি এবং আমি সেখানে উল্লেখ করেছি, কী কী কারণে আমি এটা করতে চাইছি। আমার শাশুড়ি খুব ভালো মানুষ। তিনি মারা গেছেন। কিডনি রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না। হুইলচেয়ারে করে সেই মানুষ আমার বাসা এসে বলেন, “আমি বেঁচে থাকতে এটা দেখতে পারব না যে, তমা আমার ছেলেকে ডিভোর্স দিয়েছে। যেহেতু আমি মৃত্যু পথযাত্রী, তমা তুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ডিভোর্সটা তুলে নাও।” সবকিছু মিলিয়ে আমি ডিসেম্বরে ২৫ বা ২৬ তারিখে আমি সেটা তুলে নিই।’

সঙ্গে তিনি আরও জানান, হিশামের মারামারি করার ঘটনা নতুন নয়। তার আইনজীবীর চেম্বারেও সেটা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ভিডিওতে তমা বলেন, ‘সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজ আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জমা দিয়েছি। সে ফুটেজে স্পষ্ট আছে কীভাবে সে সিনক্রিয়েট করেছে, মারামারি করেছে। এর আগেও সে আমার গায়ে হাত তুলেছে, প্রচণ্ড মারধর করেছে। তার নামে সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। তখন আমাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে বাসায় এনে আমাকে আটকে রাখে হিশাম। এরপর যখন থানায় যাই, তখনও আমার ঠোঁট ফোলা ও মুখে মারের দাগ ছিল।’

হিশামের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি এই অভিনেত্রী। বরং হিশামই টাকার জন্য তাকে মারধর করেছেন। তমার ভাষ্য, ‘সে কানাডাতে কয়েক হাজার ডলার ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। কানাডা থেকে প্রায়ই তার নম্বরে সে জন্য ফোন আসত। ফোন রাখার পর আমার উপর দিয়ে ঝড় বইত। সে তখন বলত, “এই টাকাটা তুমি দিবে।” এটা সম্ভবত ৮-১০ লাখের মতো অ্যাকাউন্ট। আমি বলেছিলাম, আমার তো টাকা নাই। সে তখন বলল, “তাহলে তুমি তোমার গাড়ি-বিক্রি করে দাও।” এভাবে ট্যাক্সের টাকা আমাকে পরিশোধের জন্য মারধরও করেছে। আমি হয়তো সহযোগিতা করতাম, যদি সে বিপদে পড়ত। কিন্তু যে মানুষটা নেশা করে পড়ে থাকে, স্ত্রীর নামে নোংরা কথা বলে, নোংরা পোস্ট করে, তার মা-ভাইয়ের বিষয়ে খারাপ কথা বলে, তাকে কীভাবে আমি সাহায্য করি?’

মামলার প্রসঙ্গ টেনে তমা বলেন, ‘মামলায় সে বলেছে আমি তাকে হত্যা করতে চেয়েছি। তার বন্ধুরা আমাকে বলেছে, সে জাস্ট ৫ মিনিটের জন্য আমার সাথে কথা বলতে চায়। যেদিন রাতে সে আমাদের বাসায় আসে, তার বন্ধুর ফোন, ভাইয়ের ফোনের রেকর্ডিং আমার কাছে আছে। পরের দিন আমাদের মিউচুয়াল ডিভোর্স হবে। যখন সে বাসায় আসল, তখন রাত ৩টা বাজে। এসেই সে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে। সে আমার ফোন নিয়ে নেয়। বলে, সে আমার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দেবে। সে লিখেছে, ‘আমি তমা মির্জা, আমি পরকীয়া করি। আমার স্বামী আমাকে হাতেনাতে ধরেছে’- এগুলো। আমি বললাম, কী সমস্যা বলো! তার পকেটের মধ্যে ৩০-৪০টা ঘুমের ওষুধ। মদের গন্ধও আসছে। তার সঙ্গে দারোয়ান ছিল। আমি তাকে গিয়ে বললাম, হিশামের অবস্থা তো ভালো না। বাসায় ফোন দিন।

এখানে একটা কথা বলি, আমার ফোন কিন্তু তখনও আমি পাইনি। সেটা পুলিশ তার পকেট থেকে উদ্ধার করে আমাকে দিয়েছে। আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডেকে আনি। পুলিশ তাকে বাসা থেকে বের করতে পারিনি। তাদের সামনেই আমাদের গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিশ তখন বলে, ম্যাডাম আপনি থানায় ডায়েরি বা মামলা করুন। তারা তখন ব্যবস্থা নেবে। হিশাম তখন আমার ঘরে গিয়ে একা একাই দরজা আটকে দেয়। আমি আমার মা-বাবাকে নিয়ে লিফটের সামনে আসি, থানায় যাব বলে। তখন হিশাম বের হয়ে আসে। সে আমার মা-বাবার সামনে আমাকে মারধর করে। তাদের বয়স ৬৫ বছরের আশেপাশে। বাবা-মা দুজনই রোগী। তাদের সামনেই আমাকে মারতে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবার চোখের নিচে চশমা ভেঙে ঢুকে যায়। আম্মুর কোমরে ফ্র্যাকচারও হয়। আমি মনে করি, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এবার তার ব্যান্ডেজ নিয়ে কথা বলি। তার হাতে ব্যান্ডেজ, কপালে ব্যান্ডেজ। সে বলেছে, আমার ৬৫ বছরের বাবা নাকি তার গলায় ফাঁস দিয়েছে। একজন গুরুতর রোগীর পক্ষে এটা আদৌ সম্ভব?’

‘এরপর যদি হিশাম আমার আর কোনো ব্যক্তিগত ছবি বা বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বা প্রকাশ করে, তাহলে আমি যদি আত্মহত্যা করি তার জন্য হিশাম দায়ী থাকবে’ বললেন তমা মির্জা।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading