কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর এবার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নে কয়া মহাবিদ্যালয় চত্বরে নির্মিত ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয়।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতরা হলেন, কয়া বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চুন্নু, অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ, নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সারাদেশ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে একই জেলায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকালে বাঘা যতীন কলেজ চত্বরে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙা দেখে তারা পুলিশকে খবর দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের মুখ ও নাকের একাংশ ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার পর আমরা প্রশাসনিকভাবে যেভাবে দুর্বৃত্তদের আটক করেছি, এ ঘটনায়ও খুব দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাক, তাদের খুব দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এ মাসের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানেই ভাস্কর্য আছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখানে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য রয়েছে সেটি আমাদের জানানো হয়নি। সে কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম। উল্লেখ্য, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি ‘বাঘা যতীন’ নামে সমধিক পরিচিত। ১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯১৫ সালে তার মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়।