শুদ্ধস্বর ডটকম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হাবিব বাবুল ভাই জার্মানি প্রবাসী আমাদের শুদ্ধস্বর পরিবারের সুপ্রিয় অগ্রজ। পত্রিকার কাজে বা যে কোনো বিষয়ে অথবা কুশলাদি জানতে প্রায়শই ঘন্টা ধরেও আমাদের কথাবার্তা হয় । সত্যি বলতে উনি অভিজ্ঞজন, স্মরণ শক্তিও বেশ প্রখর, কথা বলে মূলত আমি নিজেই উপকৃত হই এবং যেকোনো বিষয় ভিত্তিক কথায় কখন যে সময় খুব দ্রুত পাড় হয়ে যায়, প্রায়শই বুঝতেই পারি না । এই ব্যক্তিগত বিষয়টি লেখার শুরুতেই বললাম কারণ হলো আজকেই ঘন্টা দুয়েক আগে টেলিফোনে কথা হচ্ছিলো । শ্রদ্ধেয় বাবুল ভাই ফোন করেই জিজ্ঞাসা করেন সিরাজদৌলা সিনেমার সব মনে আছে কিনা ? বললাম দেখেছি তো অনেকবার। সব তো আর মনে নেই, তারপরেও বলতে পারি বেশ ভালোই মনে আছে । তারপরে একটু দুষ্টুমি করেই জিজ্ঞাসা করলাম, তা মৃত সিরাজদৌলাকে হঠাৎ কেন স্মরণ করলেন ?
বাবুল ভাই হাসিমুখে বললেন লর্ড ক্লাইভের একটি ডায়লগ আছে ” শাসন ব্যবস্থা তোমার ব্যবসা আমার “। জিজ্ঞাসা করলাম তা এই ডায়লগ হঠাৎ কেন ? তারপরে দেশ নিয়ে, দেশের রাজনীতি নিয়ে নানান কথাবার্তা, আবারো ঘন্টা পাড় হলো কিছু বুঝার আগেই । অতঃপর আমিও বেশ ভাবনায় নিজেকেই জড়িয়ে ফেললাম বাবুল ভাইয়ের কথার পরিপ্রেক্ষীতেই। আসলেই দেশের রাজনীতি, শাসন ব্যবস্থা এগুলো নিয়ে হচ্ছেটা কি ?
দেশর শাসন ব্যবস্থা লক্ষ্য করুন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করূন, সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ম লক্ষ্য করুন, তারপরে লর্ড ক্লাইভের ডায়লগটির কথা লক্ষ্য করুন, অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে । এই বিষয়ে বলার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ দশকের ভিসি মান্নান স্যারকে নিয়ে সেই সময়ে অগ্রজ বাম ঘরনার সিনিয়র ছাত্র নেতা রানা হামিদ ভাইয়ের ( প্রয়াত) কথা স্মরণ হলো, সেটা বলি । উনি একবার হাকিম চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে ভিসি মান্নান স্যারকে নিয়ে বেশ মজার ছলে অনেক কথাই বলছিলেন । রানা হামিদ ভাই কথায় কথায় বলেছিলেন, মান্নান স্যারের কাছে যে দলই যাক দাবী নিয়ে, উনি প্রয়োজনে সব দলকেই সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ভাগ করে ভোগ করার অধিকার দিবেন, তবুও নিজের চেয়ার নিয়ে যেন কেউ বাঁধা হয়ে না উঠে । তারপরে অনেক দুষ্টুমির কথাবার্তা আর রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তা ইত্যাদি।
উদহারণটি ক্যানো বললাম ? লর্ড ক্লাইভের ডায়লগ আর রানা হামিদ ভাইয়ের সেই ডায়লগেই যেন দেশ চলছে । দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে খেয়াল করে দেখেন, সবাই যার যার মতন এবং যেভাবে খুশি চালিয়ে যাচ্ছে । জবাবদিহিতার কোনো বালাই তো নাই, উল্টো ভোগ বিলাসীতার অধিকারও সরকার থেকেই সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে । এই সাপ্লাই নেবার ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বাদ নাই , হোক সেটা পাট বা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বা আমাদের গর্বের সেনা প্রতিষ্ঠান, কেউ বাদ নেই । জানি সেনা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলা ভয়ানক হতে পারে । কেননা এই প্রতিষ্ঠানটিতেই এখনও জনমানুষেরা ভরসা রাখছে বা ভরসা পায় । তবে সেই ভরসার স্তম্ভ কতটা শক্ত এখনও আছে, সেটা বিরাট প্রশ্ন বটে ।
প্রায়শই পত্রিকায় দেখি শত শত কোটি টাকা খরচে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের কি কি সব শিক্ষা গ্রহণের জন্য বৈদেশে যাওয়ার প্রকল্প তৈরি করে এবং চলেও যায়। হোক সেটা খিচুড়ি বা সুঁটকি বানানো শিখতে । জনগণের কস্টে অর্জিত টাকা, মেহনত করে ঘামের টাকা দিয়ে মূলত ভোগ বিলাসিতার উদ্দেশ্যেই বৈদেশে ছুটে । এই ভোগ বিলাসিতা মূলত এক হাত দিয়ে আরেক হাত ধোয়ার মতন । তুমি উপভোগ কর অসুবিধে নেই, কিন্তু ক্ষমতা আমার । শুধু ক্ষমতার চর্চা নয় সাথে আছে বিরাট এক ব্যবসা। সব প্রতিষ্ঠানেই উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সবাই দিনকে দিন ধনীক শ্রেনীতে পরিণত হচ্ছে। বিষয়টি যেন তুমি ধনী হও অসুবিধে নেই, আমি সরকার ক্ষমতায় থাকবো এবং সাথে আমার রাজনৈতিক ব্যবসাও বহাল তবিয়তে থাকবে। মনে হচ্ছে সর্বত্রই এই চর্চা চালু করে রেখেছে। এমনকি বিরোধী দলের উপরেও এবং বিরোধী দল নিরবে চুপিসারে গ্রহণ করে যেন বেশ ভালোই আছে । কোথায় কি কি ভোট হচ্ছে, এক সময়কার বিশাল বিরোধী দল এখন হাজার তিনেক ভোট পেয়েই যেন সর্বে শান্ত । অনেকে হয়তো বলবেন উপায় নাই । না, সেটা আর ভাববার প্রয়াশ পাই না । গণতন্ত্রের চর্চার কথা বলে ভোটে অংশগ্রহণ করে তিন চার হাজার ভোট নিয়ে বীনা লাভে চুপচাপ হয়ে আছে, এটা আর জনগণ তেমনটা খাচ্ছে না বলেই অনুমেয় হয় । ওই যে লর্ড ক্লাইভ আর ভিসি স্যারের কথা বললাম, তেমনটাই মনে হচ্ছে। যা দিচ্ছি তাই গ্রহণ করে নিজেরাও নিশ্চয়ই কোনো সুযোগ সুবিধের মাঝেই আছে, তা না হলে একি কাজ বারবার করে ক্যানো ? সাধারণ জনগণ হয়ে সেই প্রশ্ন তোলাই যায়।
লক্ষ্য করুন দেশের গর্ব ও ভরসার স্থান সেনা প্রতিষ্ঠানের দিকে । তাদের যত চাই ততই দিয়ে রেখেছে, তারপরেও টুশব্দ করা যাবে না । সেনাদের সদস্যের হত্যা হয়ে যায় এই দেশে, সেখানে দুই বাহিনীর প্রধাণের একত্রিত সংবাদ সম্মেলনের কথাটি ভাবুন । প্রয়োজনে সেই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওটি আবার একটু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন, দেখুন তো কি দেখতে পান ? কোথায় সেনা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা আর কোথায় পুলিশ প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা । এখন জলে তেলে মিশে একাকার। সেখান থেকেই বেশ অনুমান করা যায়, যা ঘটার ঘটুক। মুখে টেপ আঁটকিয়েই থাকতে হবে । কেননা তোমার প্রতিষ্ঠানকেও কম দেওয়া হয়নি, সুতরাং নো টক। আর মাথা উঁচু করবে, তোমার ভোগ বিলাসিতার কথা ভাবো । সেই ভোগ বিলাসিতা তোমার ব্যবসা আর ক্ষমতা আমার ব্যবসা।
একটু ভিন্ন বিষয়ে বলেই শেষ করবো । ভারত, ভারত , ভারত করতে করতে দম বন্ধ হবার অবস্থা। কেননা দাদা দেশটি বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দিয়ে কেবল গ্রহণ করেছে, বিপরীতে দিতে যেয়েই যত কার্পণ্যতা । সরকার আর কি করবে । একটূ সমতা আনতে এগিয়ে আসা চীনের সাথে হাত বাড়ানো । সমতা বা ব্যালান্স কতটুকু রক্ষা হবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। কেননা ভারত তো আর অত সহজে সব হজম করবে না । এদিকে চীন বিশ্ব ব্যাপি একটি ব্যবসায়ী রাষ্ট্র নামে বেশ সুপরিচিত। স্মরণ করে দেখুন, এই চীন তাঁর ব্যবসা ছাড়া কিছুই করে না। তার একটি উদহারণ কিন্তু আমাদের যুদ্ধ সময়কালে দেখা যায়। সেই সময়ে চীন কিন্তু পাকিস্তান কে একটি পিস্তলও দান করেনি । খুব সহজ, ব্যবসা পাকিস্তান করে নি চীন দেয়নি । আবার আমাদের দেশের একটি উদহারণ দেই , রোহিঙ্গারা আসার পূর্বে চীনের রাস্ট্র প্রধান আমাদের দেশে এসে বত্রিশ না তেত্রিশ বিলিয়নের একটি চুক্তি পত্র করে গিয়েছিলো । ফলাফল দুই সপ্তাহ পরেই রোহিঙ্গাদের আগমন। আমাদের সাথে তেত্রিশ বিলিয়নের চুকি করে যা ফয়দা দিয়েছিলো, তার চেয়ে অনেক অনেকগুন রাখাইন প্রদেশ থেকে আয় করবে বলেই নানান বিশ্ব জার্নালে পড়েছি । চীন ব্যবসায়ী দেশ, ব্যবসা ছাড়া তারা একটি কানাকড়িও দেয় না । পদ্মা সেতুর খবর নিন, তাহলেই বুঝতে পারবেন কৌশলে কতগুণ দাম বাড়িয়ে নিয়েছে । চীন বলেন আর ভারত বা বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা, সবার একি সূত্র, সেই লর্ড ক্লাইভের সূত্র। শাসন ব্যবস্থা তোমার তবে ব্যবসা আমার । সামনে দেখার বিষয় বিশ্ব ব্যবস্থার বিপরীতে আমাদের প্রাণ প্রিয় দেশ কতটুকু শক্ত পায়ে দাঁড়াতে পারে । নাকি, তোমার আমার ভাগেই চলে ।
বুলবুল তালুকদার
যুগ্ম সম্পাদক শুদ্ধস্বর ডটকম।