প্রেমের টান কবেই বা দেশ, সীমান্ত, কাঁটাতার, পাসপোর্ট, ভিসা, সমাজের তোয়াক্কা করেছে।সেই টানের জোরেই অসমের কামরূপ জেলার তরুণী, সীমান্তে কাঁটাতারকে ফাঁকি দিয়ে পাড়ি দিল বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের উদ্দেশে। প্রেমিক থাকে বাহরাইনে। তাই ভিডিয়ো কলেই সম্পন্ন হল নিকাহ। এমন ব্যতিক্রমী প্রেম ও বিয়ের ঘটনা কী চাপা থাকে! খবর পেয়ে বিয়ের পরের দিনেই বাড়িতে হাজির পুলিশ। আপাতত প্রেমের টানে দেশান্তরী অসমের আঞ্জুমা বেগম (বদলে দেওয়া নাম) বাংলাদেশের জেলে বন্দি!আঞ্জুমার বাড়ি কামরূপ জেলার গরৈমারি এলাকার টাপারপথার গ্রামে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের উত্তর কলাউড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুস সাত্তার এক বন্ধুর প্রেমে সহযোগিতা করা ও মেয়েকে নিয়ে পালানোয় সাহায্য করা সংক্রান্ত মামলায় আসামি হয়। বন্ধু জেলে গেলেও সাত্তার পালিয়ে চলে আসেন অসমে। গরৈমারি এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে থাকার সময়ই আঞ্জুমার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

পরে সাত্তারের পরিবার তার জন্য বাহরাইনে চাকরির ব্যবস্থা করলে আব্দুস বাহরাইন পাড়ি দেয়। কিন্তু ছিন্ন হয়নি আঞ্জুমার সঙ্গে সম্পর্ক। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমোর মাধ্যমে প্রেম চলতেই থাকে।

এ দিকে আঞ্জুমার পরিবার তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করে। বাড়িতে প্রেমের কথা জানালেও বাহরাইনে থাকা বাংলাদেশি ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হয়নি পরিবার। এক রকম জোর করেই দিন কুড়ি আগে ধুবুড়ির এক যুবকের সঙ্গে আঞ্জুমার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তারা চাংসারিতে থাকছিলেন। ইতিমধ্যে আব্দুস নিজের পরিবারকে বিয়েতে রাজি করান। কিন্তু একে করোনার জন্য সীমান্ত পারে কড়াকড়ি। তার উপরে আঞ্জুমার নেই পাসপোর্ট। ঠিক হয়, ঘুরপথে হবু বউমাকে আনা হবে বাংলাদেশে।বাড়ি থেকে পালিয়ে আঞ্জুমা প্রথমে মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে আসেন। সেখানেই সাত্তারের ছোট ভাই ইমরান তাঁকে সীমান্ত পার করান। গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশে চলে আসে ওই তরুণী। এর পর মঞ্জুরা বেগমের সম্মতিক্রমে মোবাইলে বাহরাইনে থাকা আব্দুসের সঙ্গে নিকাহ সম্পন্ন হয়।

এত কাণ্ড করে দেশত্যাগ, প্রেমিককে বিয়ে করার আনন্দ স্থায়ী হয় মাত্র ২৪ ঘণ্টা। কারণ, খবর পেয়ে পরের দিনই বিজিবি সাত্তারদের বাড়িতে হানা দেয়। বিনা পাসপোর্টে সীমান্ত পার করার দায়ে গ্রেফতার হয় আঞ্জুমা। দোয়ারাবাজার থানায় মামলা দায়ের হয়। গত কাল সেই খবর এসে পৌঁছায় গরৈমারি ও চাংসারিতে। পরিবারের লোক অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।প্রেমের টানে একূল, ওকূল দু’কূল হারানো আঞ্জুমাকে আপাতত জেলেই কাটাতে হবে দিন। নিয়মানুযায়ী কারাবাসের মেয়াদ শেষ হলে তাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হবে।কিন্তু এই ঘটনা সীমান্ত প্রহরা ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। যে ভাবে বাংলাদেশ থেকে ফেরার আসামি এত দিন কামরূপে কাটিয়ে গেল, যে ভাবে এক বিশ বছরের তরুণী একলা মেঘালয় সীমান্তে পৌঁছে, অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ চলে গেল, তা নিরাপত্তার ফাঁক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সুত্র , আনন্দবাজার পত্রিকা ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading