ভারত চায় প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। কিন্তু চিন বারবার আগ্রাসনের চেষ্টা চালানোতেই প্যাংগং, গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বেড়েছে। গালওয়ানে সেনা সংঘর্ষ হয়েছে। পূর্ব লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার লোকসভায় এ কথা বললেন রাজনাথ সিংহ। ভারত চিনের সীমান্ত নিয়ে বিতর্কের উল্লেখ করে  ভারতের    প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত হয়েছে, চিন সেটা মানতে চায় না। তার জন্যই লাদাখে আমরা অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।’’

ভারতীয় সেনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে রাজনাথ বলেন, ‘‘আমাদের জওয়ানরা বেজিংকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। গালওয়ানে সংঘর্ষে ভারতের ২০ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চিনের পক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবার যেখানে সংযম দেখানোর দরকার, জওয়ানরা সেখানে সংযম ও ধৈর্য দেখিয়েছে। এই শৃঙ্খলা ও শৌর্যের জন্য শুধু সংসদ নয়, সারা দেশবাসীর ভারতীয় সেনার পাশে দাঁড়ানো উচিত।’’

মে মাসের গোড়ায় পূর্ব লাদাখে চিনের বিপুল সেনা মোতায়েন এবং তার জেরে ১৫ জুন গালওয়ানে সেনা সংঘর্ষের পর এই প্রথম সংসদের অধিবেশন বসল। বিরোধীরা বরাবরই শাসক দলের বিবৃতির দাবিতে সরব ছিল। লোকসভায় বিষয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকেও এই দাবি জানায় কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী তাঁদের আশ্বাস দেন, সরকার তার অবস্থান জানাবে সংসদকে। সোমবার সেই মতোই লোকসভার অধিবেশনে পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতি ও সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন রাজনাথ।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ দিন প্রথমেই সীমান্ত নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গ তোলেন। পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে যে নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত, চিন সেটা মানতে চায় না বলেই সীমান্তে বারবার বিবাদ তৈরি হয় বলে উল্লেখ করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পূর্ব লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতি গোড়া থেকেই ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে প্যাংগং লেক, গালওয়ান উপত্যকা, গোগরা উপত্যকার মতো পূর্ব লাদাখের নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সেনা মজুত করে এবং মে মাসের গোড়ায় স্থিতাবস্থা ভেঙে আগ্রাসনের চেষ্টা চালায়। ভারতও পাল্টা হিসেবে সেনা ও রসদ মজুত করতে শুরু করে। এ নিয়ে সামরিক পর্যায়ে দু’পক্ষের বৈঠক, আলোচনা চলছিল। সেনা সরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই গালওয়ানে বড়সড় পদক্ষেপ করে চিন।’’

গালওয়ান সংঘর্ষের ব্যাখ্যায় রাজনাথ জানান, উত্তেজনা ৬ জুন এ নিয়ে দু’দেশের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে সেনা সমাবেশ কমাতে রাজি হয় দু’পক্ষ। বেজিংকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ক্রমাগত একপাক্ষিক ভাবে স্থিতাবস্থা পাল্টে আগ্রাসনের চেষ্টা ভারত কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। কিন্তু তার মধ্যেই গালওয়ানে বড়সড় পদক্ষেপ করে চিন। এর পর ২৯-৩০ অগস্ট রাত থেকে শুরু এক সপ্তাহের মধ্যে চার বার ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা করে চিনা বাহিনী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই রাতে ফের চিনা সেনাকে রুখে দিয়ে চিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন আমাদের জওয়ানরা।’’

তবে চিনের এই আগ্রাসনের জবাব দিতে ভারতও সেনা ও রসদ মজুত বাড়িয়েছে বলে জানান রাজনাথ সিংহ। তিনি বলেন, ক্রমাগত আগ্রাসনের চেষ্টা ও স্থিতাবস্থা নষ্ট করার বেজিংয়ের এই প্রয়াস বিভিন্ন সমঝোতা, চুক্তি ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় নির্দিষ্ট প্রোটোকল বিরোধী। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, ‘‘আগামী দিনেও সেনা তথা ভারত সরকার সর্বদা যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’ সুত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা ।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading